অভয়নগরে উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা হরিলুট

ছবি- সমকাল
নওয়াপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪ | ১৬:৫৫
যশোরের অভয়নগরে উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা হরিলুট করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর মনগড়া প্রকল্প তৈরি করে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছেন। এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানরা বলেছেন তারা টাকা উত্তোলনের ঘটনা জানেন না। অতীতেও কাজ না করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আছে এই অধিদপ্তরের।
জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (রাজস্ব) তহবিলে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য চলতি বছরের দুই কোটি দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই টাকা প্রতি ইউনিয়নে বণ্টনের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। উপজেলা প্রকৌশলী এক কোটি টাকা বিভিন্ন ইউনিয়নে বণ্টন করে বাকি এক কোটি দশ লক্ষ টাকা রেখে দেন। এ টাকা থেকে ৮০ লক্ষ টাকার ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে গোপনে কোটেশন করে ঠিকাদারের মাধ্যমে তা উত্তোলন করে পকেটস্থ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার ডুমুরতলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক বছর আগে ছাদ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের নামে মেসার্স মনির এন্টার প্রাইজের নামে ১০ লক্ষ টাকা দেখিয়ে তা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে ডুমুরতলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সমরেশ চন্দ্র বৈরাগী জানান, উপজেলা থেকে ছাদ তৈরি করার জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ করা হয়নি। বরং এক বছরেরও আগে সহযোগিতা হিসেবে পাওয়া কিছু টাকা দিয়ে এই ছাদ তৈরি করা হয়।
আরও জানা যায়, চাপাতলা চেঙ্গুটিয়া আলিম মাদ্রাসা সংস্কার না করে মেসার্স মিতু এন্টার প্রাইজের নামে ১০ লক্ষ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। ওই মাদ্রাসার সুপার জানান, মাদ্রাসার কোনো সংস্কার কাজের জন্য উপজেলা থেকে টাকা বরাদ্দ করা হয়নি। মাদ্রাসার নামে ১০ লক্ষ টাকার বরাদ্দ ছিল জানালে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়াও মিতু এন্টার প্রাইজের নামে চেঙ্গুটিয়া সান পুকুরে ৫ লক্ষ টাকা তুলে নেয়া হয়। সান পুকুরের মালিক আব্দুল গনি মোড়ল জানান, ওই পুকুর তার ৪ শরিকের। পুকুর লিজ নেওয়ার পর তিনি এক বছর আগে নিজের খরচে দেওয়াল তোলেন। সেখানে সরকারি টাকায় কোনো কাজ করা হয়নি বলে তিনি জানান।
এর পাশাপাশি সেলাই মেশিন ক্রয় না করে মেসার্স ওমর এন্ড ব্রাদার্সের নামে ৫ লক্ষ করে দুইটি প্রকল্প দেখিয়ে ১০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়। মেসার্স মতিয়া এন্টার প্রাইজের নামে ১০ লক্ষ টাকার ঢেউটিন এবং তুর ট্রেডার্সের নামে ১০ লক্ষ টাকার সিলিং ফ্যান ক্রয় দেখিয়ে টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এর আগে জুলাই মাসে তিনটি ভুয়া প্রকল্প করে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়। প্রকল্প তিনটি হলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন এবং উপজেলা আবাসিক কোয়ার্টার (পদ্মা) মেরামতের কাজ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স মনির এন্টার প্রাইজের মালিক মনির হোসেন বলেন, আমি যে কাজ করেছি তার বিল তুলেছি। তবে মেসার্স মতিয়া এন্টার প্রাইজের মালিক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমি বলতে পারবো না কি কাজ হয়েছে। ফোনে যোগাযোগ করা হলে মেসার্স মিতু এন্টার প্রাইজের মালিক ওলিয়ার রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তিনি অফিসে যেতে বলেন। অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
মেসার্স ওমর এন্ড ব্রাদার্সের মালিক মো: ওমর আলী বলেন, কী কাজ করা হয়েছে আমি জানিনা। আমার ম্যানেজার বলতে পারবে। মেসার্স তুর ট্রেডার্সের মালিক মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন আমি বলতে পারবো না কী কাজ করা হয়েছে।
এদিকে প্রকল্প সভাপতি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান জানান, আমাকে একদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি প্রকল্পের বিলে স্বাক্ষর করতে বলেছেন তাই করেছি। কাজ হয়েছে কিনা জানিনা। এর থেকে আর কিছু জানা নেই।
অপর প্রকল্পের সভাপতি প্রেমবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমানের কাছে ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো।
চলিশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, আমার ইউনিয়নে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা আমি জানি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা পরিষদের অনিয়মের কথা বলে কোনো লাভ হয় না।
উপজেলা প্রকৌশলী (বর্তমানে বদলি হয়ে মাদারীপুর এলজিইডি অফিসে কর্মরত) এস এম ইয়াফি বলেন, আমি এখন বদলি হয়ে এসেছি। ফাইল না দেখে কিছু বলতে পারবো না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম আবু নওশাদ বলেন, কাজ না করে বিল উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।
ঠিকাদার আব্দুল্যা আল মামুন বলেন, প্রতি বছর গোপনে কোটেশন করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। আমরা ঠিকাদাররা বিষয়টি জানতে পারি না। তদন্ত করলে বড় ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
- বিষয় :
- লুটপাট
- প্রকল্প
- উন্নয়ন কাজ
- আত্মসাৎ