ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

‘আমার সোনা চানকে এনে দাও, আল্লাহ গো’

মুন্সি লিটন, খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪ | ২২:১০ | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ | ০৬:১২

‘আমার মেয়েকে এনে দাও, আমার সোনা অনেক কষ্ট পাচ্ছে গো। আমার সন্তান আমার কাছে না দিয়ে, কোনখানে রাখছে গো। আমার মেয়েকে আমার কাছে দাও। আমার কলিজা, বুকটা ঠাণ্ডা করে দাও। ওরে আল্লাহ আমার সোনা চানকে এনে দাও, আল্লাহ গো।’ 

এভাবেই আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন বেইলি রোডে নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের মা বিউটি বেগম।

আজ শনিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার খোকসায় বৃষ্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের বিছানা-বালিশ ছুঁয়ে আহাজারি করছেন মা। তাঁর আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মৃতদেহের অপেক্ষায় থাকা বিউটি বেগম পানিও স্পর্শ করেননি দুই দিন ধরে। আর বাবা ঢাকায় পিতৃত্বের দাবি নিয়ে লাশের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। 

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন বৃষ্টি খাতুন।

বৃষ্টি প্রাথমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন গ্রামের একটি ব্র্যাক স্কুলে। স্কুলটির একমাত্র শিক্ষিকা মিনা পারভিন জানান, বৃষ্টির মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে কোনো কাজ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, বৃষ্টি খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি নামাজী ছিল। অনেকটা শান্ত স্বভাবের মেয়ে। বৃষ্টি মুসলিম থেকে হিন্দু হয়েছে, এমন খবরকে তিনি গুজব বলেন।

বৃষ্টি খাতুনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে স্বামী বাড়ি থেকে ছুটে এসেছেন তার বাল্যবান্ধবী শারমিন আক্তার। সমকালকে তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের একটি ব্র্যাক স্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করি। এরপর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পরে বৃষ্টি কুষ্টিয়া মহিলা কলেজে ভর্তি হয়, আর আমি গ্রামের পরিমল কলেজে ভর্তি হই।’ 

তিনি বলেন, বৃষ্টি নিয়মিত গ্রামে আসতো, একসঙ্গে ঘোরাফেরা করতাম। এছাড়াও গ্রামে থাকতে বৃষ্টি আমার সঙ্গে নামাজ পড়তো, রোজা রাখতো। এর মধ্যে তার হিন্দু হওয়ার গুজব উঠেছে। কিন্তু এরকম কোনো আভাস পাইনি। মহিলা কলেজে থাকতেও সব সময় আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হত। কিন্তু সে যে হিন্দু এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। বৃষ্টি অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে, তা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে জানান।

আজ দুপুরে বৃষ্টি খাতুনের বাড়িতে কথা হয় আপন নামের এক কিশোরের সঙ্গে। সে বলে, বৃষ্টিকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। কয়েক সপ্তাহ আগে ভ্যানে আসতে দেখেছিলাম। বৃষ্টি আপু অনেক ভালো মেয়ে। 

বৃষ্টির বাড়ির সামনে পুলিশের চৌকি বসানো হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননুর যায়েদ সমকালকে বলেন, এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বৃষ্টির লাশ আসলে পরিবার সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, বৃষ্টির মৃত্যু নিয়ে সাম্প্রদায়িক ঝামেলা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, বৃষ্টি এখানে জন্ম নিয়েছে। পরিবারসহ এলাকার লোকজন তার লাশের জন্য অপেক্ষা করছে। মরদেহ আসলে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে অন্তত ৪৬ জন নিহত হন। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ৭৬ জনকে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন।

আরও পড়ুন

×