সব কেন্দ্রে টিটু ‘ফার্স্ট’, রওশনের দুর্গে জাপা ‘লাস্ট’
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন

ইকরামুল হক টিটু
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪ | ০৭:৪৮ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ | ০৭:৫৯
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে ১২৮ কেন্দ্রের সব ক’টিতেই প্রথম হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁর ধারেকাছেও নেই অন্য প্রার্থীরা। তাঁর সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ তিনজন জামানত খুইয়েছেন। সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের দুর্গে জাতীয় পার্টি (জাপা) পেয়েছে অল্প ভোট। এ নিয়েই ভোটের পর জমে উঠেছে আলোচনা।
১২৮ কেন্দ্রেই প্রথম টিটু
ময়মনসিংহ সিটির ১২৮ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, কোনো কেন্দ্রেই দ্বিতীয় হননি টিটু। টিটুকে হারাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর লোকজন অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও মাঠে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। টিটু বলেন, মানুষ তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে আবার মেয়র বানিয়েছেন।
রওশনের দুর্গে জাপা পেল অল্প ভোট
জাতীয় পার্টির বিভক্তি রওশন এরশাদের নিজ এলাকায়ও আছে। ২০১৪ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের এমপি হয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছিলেন রওশন। এ আসন থেকে তিনবার এমপি হলেও জাতীয় পার্টির ভোটের ঝুড়িশূন্য তা বোঝা গেছে এবারের সিটি নির্বাচনে। ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টির (জি এম কাদেরপন্থি) যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল ১২৮ কেন্দ্রে সব মিলিয়ে পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৩২১ ভোট।
এ ব্যাপারে জেলা সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শহীদ আমিনী রুমী বলেন, জাতীয় পার্টি যাকে প্রার্থী দিয়েছে, তাঁকে অনেকের পছন্দ হয়নি। প্রার্থীর আর্থিক সক্ষমতাও নেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো। এ ছাড়া দলে দুই বলয় থাকায় রওশন পক্ষের নেতারা কেউ কাজ করেননি। কাদেরপন্থিদের অনেকে নীরব থেকেছেন।
তবে এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জামানত খোয়ালেন জেলা আ’লীগ সভাপতি
নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েন পাঁচ প্রার্থী। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ তিনজনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। শনিবারের নির্বাচনে যারা প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশের কম পেয়েছেন, তাদেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
মেয়র পদে টিটু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৪ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৬৩ ভোট।
ফল ঘোষণার পর প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৫ শতাংশ পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া নিয়ে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এহতেশামুল আলম বলেন, ‘ভোটের মাঠে আমার পক্ষে জয়জয়কার ছিল। কিন্তু নির্বাচনে প্রতিপক্ষের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারণে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে।’
সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু বলেন, ‘ভোট নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কী কারণে এমন হলো, তা দেখা হচ্ছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক রিপন বলেন, ‘আমরা অনেকে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর নেতাকর্মীর চাহিদা অনুযায়ী কাজ করি না। কমিটি গঠন, পদবাণিজ্যসহ নানা অসংগতি কর্মীদের মনের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। আমি মনে করি, এ নির্বাচনের এমন ফল সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।
এমপি শান্ত বলয়ের ১৬ কাউন্সিলর
টিটু মেয়র হলেও এমপি শান্তর বলয়ের নেতারা চেয়েছিলেন ৩৩ কাউন্সিলরের মধ্যে যেন অন্তত ২০ জন তাদের বলয়ে থাকে। এখন সবমিলিয়ে ১৬ কাউন্সিলর শান্তর বলয়ের বলে দাবি তাদের।