কুকুরের ধাওয়ায় গাছে মেছো বাঘ, উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ

গাছের মগডালে আশ্রয় নেওয়া মেছো বাঘ। ছবি-সমকাল
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪ | ০৫:৩১
কুকুরের ধাওয়া খেয়ে গাছের মগডালে উঠেছে মেছো বাঘ। ঘটনাটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভার ছিলাধরচর গ্রামের। সোমবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেছো বাঘটি দেখতে কয়েকটি গ্রামের উৎসুক জনতাদের ভিড় লেগেই ছিল।
তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ মেছো বাঘটিকে উদ্ধারে সকাল গড়িয়ে রাত পার হলেও ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ, পশু সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাউকে কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। পরে ফরিদপুর থেকে বনবিভাগের একটি টিম বিকেলে ঘটনাস্থলে এসে প্রথমে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়। এতে জনতার ভিড় ও উদ্ধারকারীদের তৎপরতায় বাঘটি গাছের আরও উপরে উঠে যায়। এরপর রাত সাড়ে ৯ টার পর থেকে ঢাকার এনিম্যাল রেস্কোয়ার্স বাংলাদেশ এআরবি'র একটি টিম ঘটনাস্থলে বাঘটিকে উদ্ধারের জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাতেও মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করা যায়নি। এতে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এআরবি'র সদস্য লিমন জানায়, প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করার পর মেছো বাঘটিকে আমরা নিচে নামিয়ে আনি কিন্তু বাঘটি পালিয়ে যায়। আমার দেখা মতে বাঘটি অনেকটাই বড় ছিল।
স্থানীয় মুদি দোকানদার সম্রাট মোল্লাসহ কয়েকজন জানায়, রোববার দিবাগত রাতে বেশ কয়েকটি কুকুরকে ঘেউ ঘেউ করতে শোনা যায়। সকালে রাস্তা দিয়ে স্থানীয় লোকজন যাওয়ার সময় অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান রানার বাগানে কড়ই গাছের ৪০ ফিট উপরে একটি মেছো বাঘ দেখতে পায়। এরপর সংবাদটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বাঘটিকে এক নজর দেখার জন্য উৎসুক শত শত জনতার সমাগম ঘটে। একদিকে বাঘ দেখা, অন্যদিকে বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া, এই নিয়ে উৎসুক জনতার মাঝে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়। দুপুরের পর স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়েরা এবং এলাকাবাসী মেছো বাঘের ছবি তুলতে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করতে দেখা যায়।
স্থানীয় কামরুল ও জাকির মুন্সী জানান, এসব প্রাণী এখন বিলুপ্তির পথে। তাই এগুলোকে হত্যা না করে রক্ষা করা জরুরি। তাই, অনতিবিলম্বে এই প্রাণীটিকে উদ্ধার করা প্রয়োজন। অথচ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ এই বাঘটিকে উদ্ধার করতে পারেনি। বাঘটি ক্ষুধার্ত অবস্থায় রয়েছে, এতে যে কোন সময় প্রাণীটি হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। এতে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক এসআই রাকিব জানান, স্থানীয়দের সংবাদ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌঁছায়। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি কিন্তু কোনো জায়গা থেকে বাঘটি উদ্ধারের কোনো সফলতা পাইনি। তবে, জনতার ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ কাজ করেছে।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম কুদরত এ খুদা বলেন, গাছে বাঘ দেখার সংবাদ পেয়ে আমি ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস এবং ভাঙ্গা থানাকে অবহিত করেছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে কিন্তু ফায়ার সার্ভিসে এসব পশু উদ্ধারে কিছু বিধি নিষেধ থাকায় বন বিভাগের সহায়তা নিতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা বন বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা ফারুক সরদার জানান, ফরিদপুর থেকে একটা টিম মেছো বাঘটি উদ্ধার করতে যায়। বাঘটিকে আটক করেছিলাম হঠাৎ তার গলা থেকে রশি ফসকে যায়। পরে বাঘটি গাছের আরও ৫০ থেকে ৬০ ফুট উপরে উঠে যায়। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর আমরা চলে আসি।