ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

উত্তরাঞ্চলে চেনা ঋতুর অচেনা আচরণ

উত্তরাঞ্চলে চেনা ঋতুর অচেনা আচরণ

প্রতীকী ছবি

 সৌরভ হাবিব, রাজশাহী

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ০৭:২৭ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ১০:২০

ফাল্গুন পেরিয়ে চৈত্র মাস শুরু হতে চলেছে। সারাদেশের মতো উত্তরাঞ্চলেও থাকার কথা গরম। কিন্তু দিনে কিছুটা গরম অনুভূত হলেও রাতে তীব্র শীত। কম্বল নিয়ে ঘুমাতে হয়। রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে ১৪ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমের ১০ থেকে ১৫ দিনের তাপমাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। এবারের শীত অন্যবারের তুলনায় দীর্ঘ হচ্ছে। 

কৃষি বিভাগ বলছে, দীর্ঘ সময় শীত থাকায় এবার মসুর, খেসারি, সরিষা, গমসহ রবিশস্যের ফলন ভালো হয়েছে। আবার গরম না থাকায় রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ গাছে আমের মুকুল বের হয়নি। এতে আমের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

অক্টোবরের মাঝামাছি মৃদু শীত শুরু হয় উত্তরাঞ্চলে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে তীব্র শীত পড়ে। এবারও মৃদু শীত শুরু হয় অক্টোবর শুরুর দুই সপ্তাহ পর থেকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে অর্থাৎ যখন ফাল্গুন মাসের শুরু হয়, তখন থেকেই মূলত বিদায় নিতে থাকে শীত। তবে এ বছর দেখা যাচ্ছে এর ব্যতিক্রম। মার্চের মাঝামাঝি এসেও শীত বিদায় নেওয়ার লক্ষণ নেই। উত্তরাঞ্চলে চৈত্রমাসে দেখা দেয় দাবদাহ। কিন্তু এবার শীত যাচ্ছে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সুলতান উল ইসলাম টিপু বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে চেনা ঋতু অচেনা আচরণ করছে। এখানে যখন শীত থাকারই কথা নয়, তখন কম্বল গয়ে দিতে হচ্ছে। বৈশ্বিক আবহাওয়া বা জলবায়ু পরিবর্তনের ফল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ সময় বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণের মৌসুমি বায়ু আসার কথা। কিন্তু তা আসছে না। উত্তরের হিমালয় থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে। কয়েকটি গবেষণায় আমরা দেখেছি, আমাদের মৌসুম ১০ থেকে ১৫ দিন পরিবর্তন হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব হচ্ছে। এখানে এতে ভালো-খারাপ বলে কিছু নেই। আগের পরিবেশ এখন বদলে গেছে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে আমাদের এখন নতুন করে খাপ খাওয়াতে হবে। মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের বসবাস, কৃষি, খাদ্য সবকিছুকে খাপ খাওয়াতে হবে।’

পুঠিয়া উপজেলার আমচাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শীত এবার যাচ্ছেই না। আমের বাগানের ডগাগুলো কালো হয়ে আছে। কিছু কিছু বাগানে মুকুলের বদলে এসেছে নতুন পাতা। কিছু বাগানে এখনও মুকুল বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে শীতের কারণে বের হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য বছর এ সময় গরম থাকে। গরমে সহজেই মুকুল বের হয়ে আসে। এবার ব্যতিক্রম। শীতের কবলে বাগানের আম না আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

দিনাজপুরের পার্বতীপুরের আমবাড়ী এলাকার পল্লিচিকিৎসক আজিজার রহমান বলেন, ‘ফাল্গুন মাস শেষ হতে চলেছে। শীতের তীব্রতা এখনও কমেনি। কম্বল ছাড়া রাতে ঘুমানো যায় না। রাত হলেই তীব্র শীত নেমে আসে।’ 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এ বছর দীর্ঘ শীতে অধিকাংশ গাছের আমের মুকুল দেরিতে বের হচ্ছে। গরম পড়লে দ্রুত বের হতো, শীতের কারণে এবার মুকুল বের হচ্ছে না। দীর্ঘ শীতের কারণে মসুর, খেসারি, সরিষা, গমের ফলন ভালো হয়েছে। গত বছর আমের মুকুল বের হওয়ার সময় গরম পড়েছিল। এবার ঠান্ডায় মুকুল বের হতে পারেনি কিছু বাগানে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই এমনটা হয়েছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, উত্তরাঞ্চল বাদে সারাদেশেই রাতের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকছে। কিন্তু রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির নিচে চলে আসছে। রাজশাহীতে রাতে তাপমাত্রা থাকছে ১৪ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। দিনের তাপমাত্রা থাকছে ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রির মধ্যে। রাতে আরও কিছুদিন শীত থাকবে। আস্তে আস্তে শীত গিয়ে গরম আসবে। তিনি আরও জানান, ১৩ মার্চ রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ছিল ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর ১৩ মার্চ রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি, সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, গত বছর এই সময়ে গড় তাপমাত্রা ১৫-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এ বছরও একই রকম। কিন্তু রাতের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে, ১৪ ডিগ্রিতেও নেমে যাচ্ছে। এর কারণ হলো– এ বছর আগাম বৃষ্টি হয়েছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাতে, সকালে ও সন্ধ্যায় শীত অনুভূত হচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। 

আরও পড়ুন

×