নাসিরনগর
ফাটল তিন সেতুতে চলে ভারী যান, কর্তৃপক্ষ বলছে ঝুঁকি নেই

হবিগঞ্জ-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বেণীপাড়া মহাখাল খালের ওপর নির্মিত সেতু। ছবি: সমকাল
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ১৯:৫৮ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ২০:৪১
নাসিরনগর উপজেলার হবিগঞ্জ-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কে তিনটি সেতু আছে। সেতুগুলোর ওপর দিয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক বাস, ট্রাক ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। এগুলোর বেশির ভাগ স্থানে রেলিং ও গার্ডার ভেঙে গেছে। দুটি সেতুর প্রায় এক ফুট দেবে গেছে। এতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সেতুগুলো হলো– হবিগঞ্জ-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বেণীপাড়া মহাখাল খালের ওপর নির্মিত সেতু, একই ইউনিয়নের শ্রীগর গ্রামের মেনদী আলীর বাড়িসংলগ্ন একটি সেতু ও সদর ইউনয়নের দাতমণ্ডল গ্রামের সেতু।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বেণীপাড়ার মহাখালে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণ করা হয়। এই সেতুসহ আরও দুই সেতু ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতুগুলোর গার্ডার সরে গিয়ে এক ফুটের মতো নিচে দেবে গেছে। ওই সময় এলজিইডি ও সওজের ছোট-বড় আরও ১০টি সেতু ও কালভার্ট পানিতে ভেসে যায়। তিন বছর কেটে গেলেও সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ সেতু সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে দাবি করছেন সওজের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, হবিগঞ্জ-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হবে। তখন কাজ ধরা হবে। এখনই তাদের কাছে সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না।
সরেজমিন বেণীপাড়া গ্রামে দেখা গেছে, মহাখাল সেতুর মাঝখান থেকে মূল সংযোগস্থলে প্রায় এক ফুট সরে গেছে। ১২ থেকে ১৫ জায়গায় ফাটল ধরেছে। সেখানে দেওয়া হয়েছে জোড়াতালি। কয়েকটি রেলিংও ভেঙে গেছে। দুই দিকে গার্ডার সরে গিয়ে মৃত্যুকূপ তৈরি হয়েছে। অটোরিকশা উঠলেই দুলে উঠছে সেতুটি। এর পরও প্রতি মিনিটে ৮-১০টি পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচল করছে। একই ইউনিয়নের মেনদী আলীর বাড়ি-সংলগ্ন সেতুটির ওপরের অংশও ভেঙে গেছে। বেহাল সদর ইউনিয়নের দাতমণ্ডল গ্রামের সেতুটিরও। এর দুই দিকে ফাটল দেখা দিয়েছে। পশ্চিম দিকে প্রায় এক ফুট হেলে গেছে।
বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ‘ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে হবিগঞ্জ জেলার যোগাযোগের আঞ্চলিক বিকল্প মহাসড়ক হলো এটি। কোনো কারণে সেতু ভেঙে পড়লে হবিগঞ্জ-নাসিরনগরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করে সেতুটি সংস্কারের দাবি করেন তিনি।
হবিগঞ্জ জেলার ট্রাকচালক হানিফ মিয়া বলেন, ‘সেতু দিয়া চলাচল করতে ভয় লাগে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটা জেনেও সংসারের খরচ জোগাতে গাড়ি চালাতে হয়।
লাখাই উপজেলার এক সিএনজিচালিত অটোচালক বলেন, ‘এই ব্রিরিজডার (ব্রিজ) ওপর উঠলেই মনডা ধুঁকধুঁক কইরা কাঁপে। কোন বেলা যানে এইডা ভাইঙ্গা যায়। মনে হয় এই বুঝি এইডা ভাইঙ্গা যাইতাছে।’
ফোন নম্বর থাকায় নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশলীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সহকারী প্রকৌশলী মো. ইছাক মিয়া দাবি করে বলেন, ‘সেতুগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের। তাই আমাদের ইচ্ছা থাকলেও কাজ করতে পারছি না।’
জেলা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, সেতু তিনটি দিয়ে যান চলাচলে সমস্যা ঝিল। পরে অফিস থেকে কয়েকজন টেকনিশিয়ান পাঠাই। তারা বলছেন, সেতুগুলো এতটা ঝুঁকিপূর্ণ না। এর পর তাঁকে ভাঙা সেতুর ছবি দেখালে একই কথা বলেন। পরে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।