ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

শিশুর কাঁধে দাদনের বোঝা

শিশুর কাঁধে দাদনের বোঝা

.

সনি আজাদ, চারঘাট (রাজশাহী)

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪ | ০১:৪০ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ | ০৯:৪৭

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঝিকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আসিফ আলী (১১)। বাবা ওবায়দুল ইসলাম দিনমজুর। ছয়তারা ব্রিকসের মালিকের থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। এখন ছেলেকে কাজে দিয়ে সে টাকা পরিশোধ করছেন। আসিফের লেখাপড়া বন্ধ। 

মিয়াপুর এলাকার এনআরএ ব্রিকস ইটভাটায় কাজ করে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রিমন ইসলাম। সে গঁওরা এলাকার এনামুল হকের ছেলে। বাবার দাদনের টাকা শোধ করতে তাকেও কাজ করতে হচ্ছে। 

আসিফের বাবা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সর্দারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম। ছেলে কাজ করে সে টাকা শোধ করছে। অনেকেই মালিক কিংবা সর্দারের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিয়ে মৌসুমে নিজেরা না পারলেও সন্তানদের দিয়ে কাজ করিয়ে মজুরি শোধ করা হয়।

শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন ছয়তারা ও এনআরও ব্রিকসের মালিক মাজদার রহমান এবং নাজমুল হক। তাদের ভাষ্য, ইটভাটায় অনেক ভারী কাজ। শিশুরা এসব করতে পারে না। তাই তাদের দিয়ে কাজ করানোর প্রশ্নই আসে না। 

রাজশাহীর চারঘাটে ১০টি ও পুঠিয়া উপজেলায় ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এ ২৭ ভাটায় প্রায় ৫৫০ জন (গড়ে ২০ জন) শিশুশ্রমিক কাজ করে। চারঘাটের ছয়তারা ব্রিকস, এনআরএ ব্রিকস, সুপার ব্রিকস-১, পুঠিয়ার সুপার ব্রিকস-২, বিবিএফ ব্রিকস, মদিনা ব্রিকস, মডার্ন ব্রিকসে ১০-১৫ জন করে শিশু শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। কেউ বাবার নেওয়া দাদনের টাকা শোধ করতে, কেউবা সংসারের সাহায্য করতে ইটভাটায় কাজ করছে। কম টাকায় কাজ করানো যায় বলে মালিকরাও তাদের নিয়োগ করেন বলে জানান চারঘাটের হলিদাগাছী এলাকার ইটভাটা শ্রমিক খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকরা কাজ করলে এক মৌসুমে (ছয় মাস) ১ লাখ টাকা পান। সেখানে শিশুদের দেওয়া হয় ৬০ হাজার টাকা। 

পুঠিয়ার দিঘলকান্দি গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে রাব্বি ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। স্কুল বাদ দিয়ে সে সুপার ব্রিকসে কাজ করছে। এ ভাটায় রাব্বি ছাড়াও লিপন, খাইরুলসহ ছয় শিশুকে কাজ করতে দেখা যায়। 
সুপার ব্রিকস ইটভাটার পরিচালক শাহাবুদ্দিন আলী বলেন, কোনো শিশু আমাদের ভাটায় কাজ করে না। তারা হয়তো ভাটার কাজ দেখতে এসেছিল। 
চারঘাট উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি একরামুল হক টিপু বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ইটভাটায় নিয়োগ দিতে নিষেধ করা আছে।

চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালুতে শিশুদের অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া কম বয়সে বেশি পরিশ্রমের ফলে শারীরিক ও মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চারঘাট উপজেলা শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো শিশু বা কিশোরকে কাজে নিযুক্ত করলে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন শিশুদের কাজে নিয়োগদাতারা।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর রাজশাহীর উপমহাপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি এ অঞ্চলে সদ্য যোগদান করেছি। শিগগির ইটভাটাগুলো পরিদর্শন করা হবে। শিশুদের কাজে লাগানোর বিষয়টির সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×