ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সাব-রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ কর্মবিরতি

সাব-রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ কর্মবিরতি

বকশীগঞ্জে সাব- রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে বুধবার বিক্ষোভ করেন দলিল লেখকরা। ছবি: সমকাল

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ০৬:২৪ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪:০৩

বকশীগঞ্জে নিজ কার্যালয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান মুহাম্মদ তামীম। অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসদাচরণের অভিযোগে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন দলিল লেখকরা। তাঁর অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বুধবার বিকেলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এ ঘটনা ঘটে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রার। তাঁর দাবি, অনৈতিক আবদার না মানার কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন দলিল লেখকরা।

দলিল লেখকরা জানান, গত বছরের ১৫ অক্টোরব বকশীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন আবদুর রহমান মুহাম্মদ তামীম। যোগদানের পর থেকেই দলিল লেখকসহ জমির দাতা-গ্রহীতাদের সঙ্গে অসদাচরণ করে আসছেন। কথায় কথায় দলিল লেখকদের সনদ বাতিলের হুমকি দেন।

সকাল বেলার দলিল তিনি রাতে পাস করেন। মনগড়াভাবে চালাচ্ছিলেন সরকারি অফিস। তাঁর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন দলিল লেখকরা। দিন দিন তাঁর হয়রানি বেড়েই চলছিল। বুধবার রেহেনা বেগম নামে এক নারী তাঁর বোন রুবিনা আক্তারকে ৫৮ শতাংশ জমি হেবা দলিল করে দিতে যান। ওই দলিল নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কামরায় যান দলিল লেখক শহিদুল্লাহ। এ সময় সাব-রেজিস্ট্রার জমির দাতার কাছে জানতে চান কেন তিনি তাঁর বোনকে হেবা দলিল করে দিচ্ছেন। কত টাকা নিয়েছেন। তাঁর এমন প্রশ্নের এক পর্যায়ে জমির দাতা বলেন, তাঁর বোন তাঁকে কিছু টাকা দিয়েছেন।

তাই দলিল করে দিচ্ছেন। এই কথা শুনেই সাব-রেজিস্ট্রার রেগে যান এবং দলিলটি সম্পাদন না করেই ফিরিয়ে দেন। বিষয়টি জানতে দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি আলী আহসান খোকা সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে যান। এ সময় আলী আহসান খোকা ও শহিদুল্লাহর সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং তাদের দু’জনকেই ‘সাময়িক বহিষ্কার’ করেন সাব-রেজিস্ট্রার। মুহূর্তেই এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে অন্য দলিল লেখকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিক তাঁর অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা। এক পর্যায়ে সাব-রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে রাখেন দলিল লেখকরা। সেই সঙ্গে তাঁর অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এতে বেকায়দায় পড়েন দাতা-গ্রহীতারা।

বগারচর এলাকার আল আমিন জানান, ঢাকার কর্মস্থল থেকে এক দিনের ছুটি নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে এসেছেন তিনি। ব্যাংক চালানসহ সব কাজই সম্পন্ন করেছেন। হঠাৎ করেই সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের দ্বন্দ্বে তিনি আর দলিলটি করতে পারেননি।

বকশীগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি আলী আহসান খোকা বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার মানুষকে মানুষ মনে করেন না। অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন তিনি। কথায় কথায় দলিল লেখকদের সনদ বাতিলের হুমকি দেন। আজ (বুধবার) বৈধ একটি দলিল না করে ফিরিয়ে দেন। কারণ জানতে চাইলে খারাপ আচরণ করেন এবং আমাদের দুইজনকে সাসপেন্ড করেন।’

দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফিরোজ মিয়ার ভাষ্য, সাব-রেজিস্ট্রারের আচরণে সবাই অতিষ্ঠ। মনগড়াভাবেই চলছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। তাঁর অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

অভিযোগের বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান মুহাম্মদ তামীম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই কিছু দলিল লেখক তাঁর কাছে অনৈতিক আবদার করে আসছিলেন। তাদের কথামতো কাজ না করায় আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা।’ তিনি বলেন, ‘কাউকে সাসপেন্ড করার সুযোগ আমার নেই, তাদের শোকজ করেছি মাত্র। তারা সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করেছে। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করেছে। দলিল লেখকরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এই ঘটনায় মামলা করব।’

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর থেকে টানা সাত দিন সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান মুহাম্মদ তামীমের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন ও কর্মবিরতি পালন করেন দলিল লেখকরা।

আরও পড়ুন

×