সেবা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
রামেক হাসপাতালে কর্মবিরতি

ছবি: ফাইল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ০৬:৪০ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৩:৫৯
বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে দেশজুড়ে চতুর্থ দিনের মতো গতকাল বুধবার কর্মবিরতি পালন করেছেন পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কর্মবিরতিতে চিকিৎসা না পেয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত মাহমুদুল রহমান নামে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে সেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কর্মবিরতির পাশাপাশি আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন চিকিৎসকরা। পরে দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখা করবেন তারা।
শুধু সরকারি চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালে সেবা পরিচালিত হওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তি দেখা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন ওয়ার্ড ও শিশু ওয়ার্ডের প্রতিটি কক্ষের সামনের বারান্দায় রোগী ও স্বজনের কারণে তিলধারণের ঠাঁই নেই। রোগীর চাপে তাদের ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। বাধ্য হয়ে অনেকেই ফিরে গেছেন।
শিশু ওয়ার্ডের ২০৮ নম্বর কক্ষে দেখা যায়, টিকিট হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত ৬০ রোগী। তাদের একজন ফারজানা শারমিন। তিনি বলেন, এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। বাড়িতে দেড় বছরের বাচ্চা রেখে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কখন ডাক্তার দেখাব, আর কখন বাড়ি ফিরব জানি না।
একই অবস্থা জরুরি ও আন্তঃবিভাগের রোগীদেরও। আজিমপুরের বাসিন্দা ৪৪ বছর বয়সী ফাতিয়া বেগম ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রচুর রোগী। সারাদিনে একবারও চিকিৎসক আসেন না। নার্সরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই হাসপাতালে ৭০০ জনের বেশি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজ করেন। মূলত এসব চিকিৎসক দিয়েই হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। তাদের কর্মবিরতিতে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকে ৩৫০ জনের বেশি রোগী দেখেছি। দশজনের কাজ একজনকে করতে হচ্ছে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। রোগীদের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।
মাহমুদুলের লাশ পড়ে ছিল হাসপাতালের বারান্দায়
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত পাবনার মাহমুদুল রহমান (৫৫)। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর লাশ পড়ে ছিল হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায়। পাশে স্ত্রী সীমা বেগম আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘আমি ক্যাম্বা কইরে বুঝ দিব আমার পিচ্ছিডারে।’ বলতে বলতেই মেঝেতে শুয়ে পড়েন তিনি। পায়ের কাছে বসে বিলাপ করছিলেন মাহমুদুলের মা নুরুন্নাহার। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। তখন চিকিৎসক ছিলেন না। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসক আসার কিছুক্ষণ পর মাহমদুল মারা গেছেন।
চিকিৎসক না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, আমাদের মিড লেভেলের ডাক্তাররা রাত ও দিন পরিশ্রম করছেন। এত বড় হাসপাতাল, রোগী তো মারা যাবেই।
এদিকে বকেয়া ভাতা পরিশোধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পাশাপাশি গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন চিকিৎসকরা।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনিদের ভাতা ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন। গত বছর ওই ভাতা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। তবে এতে তারা সন্তুষ্ট নন। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ১৫ হাজার টাকা ভাতা পান; তারা সেটি ৩০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন।
কর্মবিরতি প্রসঙ্গে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, আজ আমাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে। তাঁর সঙ্গে আলোচনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব কাজে ফিরব কিনা।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন রাজশাহী ও চট্টগ্রাম ব্যুরো)
- বিষয় :
- রামেক
- ইন্টার্ন চিকিৎসক
- কর্মবিরতি