বেতন-বোনাসের জন্য সড়কে

বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়কে গাছ ফেলে বিক্ষোভ করেন ওডিসি কারখানার শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার ধামরাইয়ের সোমভাগ-ফুকুটিয়া এলাকায় সমকাল
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) ও ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:৩৫
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ঢাকার ধামরাইয়ে দুটি কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নেমেছিলেন। তাদের সড়ক থেকে সরাতে গতকাল বৃহস্পতিবার বলপ্রয়োগ করতে হয় শিল্পপুলিশকে। এ সময় তাদের ওপর জলকামান ও টিয়ারশেল ছুড়তে হয়। লাঠিচার্জের অভিযোগও করেছেন শ্রমিকরা। দুই এলাকায় অন্তত ৩০ জনের মতো আহত হয়েছেন।
রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার বরপা এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবরোধ করেছিলেন রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা এসিএস টেক্সটাইলের শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তাদের বেতন বকেয়া। মালিকপক্ষ কয়েক দিন ধরেই বেতন পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করছে। মার্চে তারা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস ঈদের আগে পরিশোধের আশ্বাস দেন। বৃহস্পতিবার টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
শ্রমিকরা এদিন কাজে এসে জানতে পারেন, বেতন-বোনাস ঈদের পরে দেওয়া হবে। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তারা ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নেন। সংবাদ পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। শ্রমিকরাও এ সময় ইটপাটকেল ছুড়েছে। সেখানে অন্তত ১২ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, বেতন না পাওয়ায় বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানেও বাকি জমেছে। এখন কোনো দোকানিই বাকিতে পণ্য দিচ্ছেন না। উল্টো তাগাদা দিচ্ছেন। বেতন-বোনাস না পেলে তাদের ঈদ করা হবে না।
রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জুবায়ের হোসেন বলেন, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে নারায়ণগঞ্জের এএসপি তরিকুল ইসলাম মাথায় আঘাত পেয়েছেন। কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের ধামরাই কালামপুর সড়কের পাশে ফুকুটিয়া এলাকায় অবস্থিত ওডিসি ক্রাফট প্রাইভেট লিমিটেডের কারখানার শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে কয়েক দফায় বিক্ষোভ করেন। সূত্র জানায়, ওই কর্তৃপক্ষ বেতন-বোনাস না দিয়ে ঘোষণা ছাড়াই মঙ্গলবার রাতে কারখানা বন্ধ করে দেয়। বুধবার সকালে শ্রমিকরা কাজে গিয়ে ফটকে তালা দেখতে পান। তারা তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে শিল্পপুলিশ বাধা দেয়। পরে কৌশলে তাদের ভেতরে ঢুকিয়ে ফটক আটকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ১৫ জন শ্রমিক আহত হন। তাদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা সামছুন নাহার ও সাথীর অবস্থা গুরুতর।
শ্রমিকরা জানান, কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিন তাদের বৃহস্পতিবার বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এদিন সকালে তারা জানতে পারেন, এদিনও বোনাস দেওয়া হবে না। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে জয়পুরা এলাকায় ঢাকা-আরিচা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরে শিল্পপুলিশ টিয়ারশেল ও জলকামান দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তিন শ্রমিক আহত হন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সেখান থেকে যান ধামরাই-কালামপুর আঞ্চালিক মহাসড়কে। তারা সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর ও কারখানার পাশের সড়কে গাছ ফেলে লাঠি নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিতে চাইলে তারাও পাল্টা ধাওয়া দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ধামরাই থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ ও সোমভাগ ইউপি চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন এসে শ্রমিকদের শান্ত করেন। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে তারা সমঝোতায় বসান।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিন বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে। ৮ এপ্রিল বোনাসসহ তাদের সব পাওনা পরিশোধ করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামরাই থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, শ্রমিকরা আজ (শুক্রবার) থেকেই কাজে ফিরবেন।
- বিষয় :
- বেতন বন্ধ