ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

নারায়ণগঞ্জে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙায় বিএনপির ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙায় বিএনপির ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: মেহেদী হাসান সজীব

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১:১০

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে চাষাঢ়ায় অবস্থিত জিয়া হলের (টাউন হল) ওপরে থাকা প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন বিএনপি নেতারা।

জিয়া হলের কেয়ারটেকার আরিফুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে তিনি দেখতে পান ম্যুরালটি হলের ছাদের যে অংশে ছিল সেখানেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। পরে আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দুপুরে জিয়া হলে ভাঙা ম্যুরাল পরিদর্শনে আসেন মহানগর বিএনপি নেতারা। 

বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানকে দায়ী করে বলেছেন, আলোচনায় থাকতে তিনি রোজার মাসে এই কাজ করেছেন। অন্যদিকে মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ বলছেন, জিয়া হলের নাম পরিবর্তন একান্ত যদি করতেই হয় তাহলে তা সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা উচিত। 

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘জিয়া হল দেখভালের স্থানীয় অথরিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ফলে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলার দায়দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। জিয়া হল ভাঙার জন্য সরকারি দলের এমপি শামীম ওসমান সংসদে বক্তব্য রেখেছেন। আর এরপরেই এ ঘটনা ঘটল। আমরা মনে করি, শামীম ওসমানের নির্দেশেই এই কাজ করা হয়েছে। এই ম্যুরাল ভেঙে ফেলায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, এমপির নীলনকশার অংশ হিসেবে এবং জিয়াউর রহমানকে জনগণের অন্তর থেকে মুছে ফেলার জন্য এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ম্যুরালটি হ্যাক্সোব্লেড দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা ডিসির সাথে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন এই ব্যাপারে কিছু জানেন না। যারা এই অপকর্ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। জিয়ার ম্যুরাল পুনরায় স্থাপনের দাবি জানাই।’ 

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘আলোচনায় থাকতে শামীম ওসমান এই ম্যুরাল ভেঙেছেন। তিনি শান্তিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জে অস্থিরতা তৈরি করতে চান। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সড়কসহ শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে হাত দেয়নি। শামীম ওসমানের বাবা-দাদার নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ হলে সেখানেও হাত দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারা জিয়ার ম্যুরাল ভেঙে প্রতিহিংসার পথ তৈরি করেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই ম্যুরাল প্রতিস্থাপিত না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ও বীর উত্তম। তার ম্যুরালে আঘাত মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে সব সময় কাজ করে। চাষাড়ায় বিজয়স্তম্ভ, মাসদাইরে প্রথম প্রতিরোধের ভাস্কর্য, বক্তাবলীতে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে শহীদ মিনার সব আমার সময়ে করেছি। কিন্তু শামীম ওসমান ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত কোনো স্থাপনা করেননি বরং তিনি ক্ষমতায় এলেই মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী জিয়াউর রহমানের নামের এই হলটির নাম নিশানা মুছে দিতে চান। এর আগেও তিনি জিয়া হলের নামের উপরে কালি লেপে নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন।’

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ঢাকা দক্ষিণ) সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘এমপি শামীম ওসমান যদি এটির নাম পরিবর্তন করতেই চান তার উচিত সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তা করা। কারণ, এটি ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কিন্তু এভাবে ম্যুরাল ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে শামীম ওসমান নিজের গডফাদার নামটির সার্থকতা প্রতিপন্ন করলেন।’

বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে মিথ্যার রাজনীতি, ব্লেইমের (দোষারোপ) রাজনীতি। এ পর্যন্ত তারা যা কিছু করেছে, মিথ্যা দিয়েই করেছে। যেহেতু তারা মিথ্যার ওপর ভর করে রাজনীতি করে, তাই তাদের নেতাদের কথার জবাব দেওয়ার মানসিকতা বা ইচ্ছা আমার নেই।’

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, ‘ম্যুরাল ভাঙার বিষয়টি আমার জানা নেই। জেলা প্রশাসন এই হলটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। ভবনটি ভাঙার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু ম্যুরাল ভাঙার কোনো উদ্যোগ জেলা প্রশাসন নেয়নি। কোনো দুর্বৃত্ত এই কাজ করে থাকতে পারে। বিষয়টি আমি পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে দেখবে।’

আরও পড়ুন

×