ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বারবার হকার পুনর্বাসনে মিলছে না সুফল

সিলেট সিটি করপোরেশন

বারবার হকার পুনর্বাসনে মিলছে না সুফল

শেষ মুহূর্তেও ঈদবাজারে ক্রেতা পাচ্ছেন না পুনর্বাসিত হকাররা। সোমবার সিলেট নগরীর লালদীঘিরপাড় হকারশেডের চিত্র সমকাল

 ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:৪৮ | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:৪৯

হকারদের পুনর্বাসনে লালদীঘির পাড়ে কোটি টাকা ব্যয়ে আবারও উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। তবে নানা কারণে এ উদ্যোগও ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, পুনর্বাসন শেডের চতুর্মুখী সড়ক না থাকা, পানি উঠে যাওয়া, প্রচারের অভাব, সিসিকের নজরদারি না থাকা, হকারদের সিন্ডিকেট, পুলিশের অসহযোগিতা, রাজনৈতিক প্রশ্রয়সহ নানা কারণে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে। তারা মনে করেন, এবারের ঈদে ফুটপাতে হকার না থাকায় যে স্বস্তি মিলেছে, তা ধরে রাখতে হলে পুনর্বাসন শেডের আধুনিকায়ন প্রয়োজন।

সিলেট নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক বন্দরবাজার-চৌহাট্টা-আম্বরখানা। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের পুরো ফুটপাত দখলে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন হকাররা। সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেওয়ায় নিয়মিত দেখা দেয় যানজট। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও লাভ হয়নি।

এ অবস্থায় সর্বশেষ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য সিসিক ও এসএমপি যৌথভাবে কাজ শুরু করে। লালদীঘির পাড় খালি মাঠে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে পুনর্বাসন করা হয়। এতে সিসিকের ব্যয় হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। প্রথম ধাপে শেডে স্থান পান বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কের হকাররা। প্রথম দিকে লোকজন সেখানে কম গেলেও ধীরে ধীরে জমে ওঠে লালদীঘি মাঠ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বাজারটি পরিচিত হতে থাকে। এভাবেই চলে মাস চারেক। পরে আবার দখল হতে থাকে ফুটপাত। হকাররা সুযোগ বুঝে সেখানে বসতে শুরু করেন।

এর আগে ২০১২ সালে একইভাবে হকারদের পুনর্বাসন করা হয় লালদীঘির পাড় মাঠে। কিন্তু তারা সেখানে বেশিদিন টেকেননি। নানা অজুহাতে ফুটপাতে ফেরেন।
এবার কোটি টাকা ব্যয়ে হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সিসিক। গত ১০ মার্চ লালদীঘির পাড়ে প্রায় ৪ একর জায়গায় হকার পুনর্বাসনে অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণ করে নগর কর্তৃপক্ষ। এতে ফুটপাত হকারমুক্ত হলেও কত দিন এভাবে রাখা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

ফুটপাত হকারমুক্ত হলেও সেখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালকদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। এ কারণে যানজটের সমস্যা পুরোপুরি দূর হয় না। 
সরেজমিন লালদীঘির পাড় অস্থায়ী মার্কেটে দেখা যায়, শতাধিক হকার পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মাছ, সবজি থেকে শুরু করে জামাকাপড়, জুতাসহ সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। হকারদের কেউ কেউ নতুন জায়গায় ব্যবসা জমে ওঠার বিষয়ে আশাবাদী; কেউ কেউ হতাশ। সবাই বলছেন, ফুটপাতের বেচা-বিক্রির চেয়ে অনেক কম হচ্ছে সেখানে। হকার মেরাজুল ইসলাম বলেন, তিন দিনে গড়ে ৫০০ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারেননি। এভাবে চলা কষ্টকর। চতুমুর্খী সড়ক না থাকায় ক্রেতারা মার্কেটে আসতে চান না।

পাশেই তালা-চাবি মেরামতকারী সিরাজ মিয়া বলেন, প্রতিদিন আসি। কিন্তু ইফতারের টাকাটাও তুলতে পারি না। এখানে শেড তৈরির আগে সড়ক তৈরি করা প্রয়োজন ছিল।

হকার নেতা আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা বসছি। দেখি কী হয়! এখানে আসার রাস্তা করতে হবে। প্রচার থাকতে হবে। তাহলেই বিক্রি বাড়বে।’
ফুটপাত দখলমুক্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক নগরবাসী। নগরীর আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, বন্দরবাজার, সুরমা মার্কেট পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সব ফুটপাতই হকারমুক্ত। কমেছে যানজটও।

এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান জহির বিন আলম সমকালকে বলেন, রাস্তায় যখন হকাররা বসেন, তখন যান ও জনচলাচল দুটিই বাধাগ্রস্ত হয়। থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায়ও একসময় এ রকম অবস্থা ছিল। তারা হকার সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। কলকাতায়ও হকাররা ফিরেছেন শৃঙ্খলায়। তারা কীভাবে সমস্যার সমাধান করছেন, নগর কর্তৃপক্ষকে সেটা দেখতে হবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করছেন। তবে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সিলেট চেম্বার অব কমাসের্র সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, নতুন মেয়র হকারদের ব্যবসার জন্য স্থান করে দিয়েছেন। তারা সঠিকভাবে ব্যবসা করলে নগরীতে যানজট থাকবে না। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, অনেক ভেবেচিন্তে এগোতে হচ্ছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করার পাশাপাশি অবৈধ পার্কিং ও স্ট্যান্ড অপসারণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হচ্ছে। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আশা করি, শিগগির সমস্যার সমাধান হবে। ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। নতুন শেডে যাওয়ার জন্য চতুর্মুখী সড়ক ব্যবহারের কৌশল খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া উন্নত টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন

×