ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ঈদে মাংস কিনতে না পারার লজ্জায় দিনমজুরের আত্মহত্যা

ঈদে মাংস কিনতে না পারার লজ্জায় দিনমজুরের আত্মহত্যা

হাসান আলী। ফাইল ছবি।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১৮:২১ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১৯:২৮

স্ত্রী ও চার বছরের ফুটফুটে কন্যা নিয়ে দিনমজুর হাসান আলীর সংসার। রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করে যতসামান্য আয় হত তা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করতেন তিনি। কাজ না থাকলে ধারদেনা করতে হত। তা-ও না পেলে খেয়ে না খেয়ে দিনকাটত। হাসানের কাছে ঈদ মানে খুশির চেয়ে চিন্তা আর উৎকণ্ঠা বেশি। এবার তিনি স্ত্রী-সন্তানদের জন্য তেমন কিছুই কিনতে পারেননি। চেয়েছিলেন অন্তত পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন গরুর মাংস কিনে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবেন। তাতেও ব্যর্থ হয়ে ভীষণ লজ্জায় পড়ে যান। করেন আত্মহত্যা, ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে চিরকুটে লিখে যান না বলতে পারা সেই কষ্টের কাহিনী।

জামালপুরের বকশীগঞ্জের বগারচর ইউনিয়নের বান্দেরপাড় গ্রামের রহমত আলীর ছেলে হাসান। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছিল ২৫ বছর বয়সী এই যুবকের মরদেহ।  লাশটি উদ্ধার করেছে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ। 

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবার ভিটা থেকে কিছুটা দূরে আলাদা বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন হাসান। ঈদের আগে সহধর্মিনী ও কন্যাকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠান তিনি। বলে দেন, ঈদের দিন আনতে যাবেন। পরিকল্পনা করেছিলেন ঈদের দিন অন্তত তাদের গরুর মাংস কিনে খাওয়াবেন। সারাবছরতো দূরের কথা গত ঈদেও পরিবারের সদস্যদের মাংস কিনে খাওয়াতে পারেননি তিনি। এ জন্য মাংস কেনার পর স্ত্রী-সন্তানকে আনতে যেতে চেয়েছিলেন।

চিঠিতে হাসান লিখেছেন, 'আমার স্ত্রী এবং সন্তানকে আমি অনেক ভালোবাসি। তোমরা আমার বউ এবং মেয়েকে দেখে রাখবে। এই ঈদেও আমি তাদেরকে গরুর মাংস কিনে দিতে পারিনি।'

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমিনুল ইসলাম জানান, হাসান নিতান্তই গরীব মানুষ ছিলেন। তিনি রাজ মিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। হাতে কাজ না থাকলে অন্য কাজও করতেন। তিনি অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।

নিহতের স্ত্রী আফরোজা বেগম বলেন, 'হাসান অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের অনেক ভালোবাসতেন। তিনি বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে আমাদের আনতে যাবেন। কিন্তু তিনি আর যাননি। রাতে তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাই শুক্রবার সকালে নিজেই বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। অনেক ধাক্কাধাক্কির পরও না খুললে বেড়ার ফাঁকা তাকালে তাঁকে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলতে দেখি। এ সময় চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। তিনি চিরকুটে লিখে যান- এবারের ঈদেও গরুর গোস্ত খাওয়াতে পারলাম না, তাই আত্মহত্যা করলাম। কিন্তু তাঁর কাছে কোনো আবদার ছিল না। শুক্রবার রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে।'

বকশীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান জানান, পরিবারের আপত্তি না থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 
 

আরও পড়ুন

×