ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

আলো ছড়ানোর প্রকল্প অন্ধকারে

আলো ছড়ানোর প্রকল্প অন্ধকারে

রাজশাহীর চারঘাটের সরদহ ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামে সৌরবাতি প্রকল্পের বাতিহীন বাক্স সমকাল

সনি আজাদ, চারঘাট (রাজশাহী)

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:২৪ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ১২:৩২

কোথাও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল আছে, বাতি নেই; আবার কোথাও বাতি আছে, প্যানেল গায়েব। ব্যাটারি ও লাইটহীন বাক্সে পাখি বেঁধেছে বাসা। তিন বছর পর্যন্ত দেখভালের কথা থাকলেও সে কথা রাখেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি রাজশাহীর চারঘাটের প্রত্যন্ত গ্রামে স্থাপন করা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে। ১০ বছর বাতিগুলো আলো দেওয়ার কথা থাকলেও এক বছরের মধ্যেই তা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক ও এসডিআরএস মাঠপর্যায়ে এ কাজ বাস্তবায়ন করেছে। প্রতিটি স্ট্রিট লাইটে তিন বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি রয়েছে। পরবর্তী সাত বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সার্ভিস চার্জ নিয়ে মেরামত করবেন বলে জানা গেছে। তবে বাতিগুলো লাগানোর দুই মাস না যেতেই সব অকেজো হয়ে গেছে। এতে চুরি-ছিনতাই বাড়ছে। ঠিকাদারকে মেরামতের কথা বলা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। উপজেলার মাসিক সভাতেও বিষয়টি উপস্থাপন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরদহ ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ বছরে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বাস্তবায়ন করতে দুই বছর লেগে গেছে। কাজেই সার্ভিস ওয়ারেন্টি এখনও আছে। 

নিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, তাঁর ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজারের সৌরবাতিগুলো বছরখানেক আগে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চুরি-ছিনতাই বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি বলেছেন। এরপরও বাতিগুলো মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 

চেয়ারম্যানদের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের চারঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত জহুরুল ইসলাম বলেন, সার্ভিস ওয়ারেন্টি ছিল তিন বছরের। কাগজ-কলমে সে সময় পার হয়ে গেছে। এখন প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সার্ভিস দিতে পারব। 

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ত্রাণ পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় চারঘাটে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ছয়টি ইউনিয়নের মসজিদ, মন্দির, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৪৪টি সোলার সিস্টেম প্যানেল ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়। প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টের জন্য বরাদ্দ ৮৬ হাজার ৪৯০ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে পৌরসভায় জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ২ কোটি টাকা খরচ করে ১৫৯টি সোলার স্টিক লাইট স্থাপন করা হয়। প্রতিটি সোলার স্টিক লাইটের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৮৬ টাকা। এ প্রক্রিয়ায় সূর্যের রশ্মি ও তাপ শুষে নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে সোলার প্যানেল। সূর্য অস্ত যাওয়া মাত্রই জ্বলে উঠবে সড়কবাতি। অথচ সন্ধ্যা নামলেই চারঘাট পৌরসভাজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। জলবায়ু ফান্ডের টাকায় স্থাপনকৃত অধিকাংশ স্টিক লাইট অকেজো।

সরেজমিন উপজেলার ঝিকরা-নন্দনগাছী, ফুলতলা-পকেটখালী মোড়, বনকিশোর-পুঠিমারী ও কাঁকড়ামারী-পরানপুর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, জনশূন্য এসব সড়কের অধিকাংশ সৌরবাতি অকেজো। সৌরবাতির খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাটারি ও লাইট হারিয়ে গেছে। একই অবস্থা ভাটপাড়া, শলুয়া, রাওথা, মনোহরপুর, অনুপামপুর, ফতেপুর, শিবপুর, বালুদিয়াড়, নিমপাড়া, পিরোজপুর, বাসুদেবপুর, জয়পুর, ডাকরা, রায়পুর বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলোরও। সেগুলো দীর্ঘদিন জ্বলে না।
ভাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা কাওসার আলী বলেন, যখন সৌরবাতি ছিল তখন সড়কগুলো নিরাপদ ছিল। কিন্তু এখন ঘুটঘুটে অন্ধকারে নির্জন সড়কে ভয়ে থাকতে হয়। মাঝে মধ্যেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, নিম্নমানের হওয়ায় বাতিগুলো স্থাপনের কয়েক মাস পরেই অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন শুধু খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে। সৌর প্যানেল ও ব্যাটারি গায়েব হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদকে বলেও কোনো কাজ হয়নি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম শামীম আহম্মেদ বলেন, অকেজো সৌরবাতির তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সচলের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগ থাকায় জামানতের টাকা এখনও দেওয়া হয়নি।

পৌরসভার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, সৌরবাতিগুলো প্রথম ছয় মাস ঠিকমতো জ্বলেছিল। এরপর থেকে অকেজো। তবে বেশির ভাগ বাতিই প্রভাবশালীদের আত্মীয়স্বজনের বাড়ির আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে। কোটি টাকার প্রকল্পে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতে পারেনি। 
উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বাতিগুলোর কার্যকর মেয়াদ পাঁচ বছর থাকলেও বছর না যেতেই সব অকেজো হয়ে গেছে। ইউনিয়নগুলোয়ও একই অবস্থা। 
পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেগুলো সচল করার ব্যবস্থা করা হবে। 

আরও পড়ুন

×