ছয় বছরেও শেষ হয়নি কালিয়া সেতু নির্মাণ

নড়াইলে নবগঙ্গা নদীতে অর্ধনির্মিত কালিয়া সেতু। সাম্প্রতিক ছবি সমকাল
মশিউল হক মিটু, কালিয়া (নড়াইল)
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:১২
কালিয়া উপজেলা সদর থেকে জেলা সদর নড়াইলের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। এটুকু পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে যেতে স্থানীয়দের সময় লাগে দেড় ঘণ্টারও বেশি। নবগঙ্গা নদীর কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দিতে হচ্ছে এ মাশুল। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৫ লাখের বেশি বাসিন্দার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ছয় বছর আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নবগঙ্গা নদীতে সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। দুই বছরে এর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনবার মেয়াদ বাড়িয়েও নকশা জটিলতায় কাজটি শেষ করতে পারেনি।
জানা যায়, নদীর মাঝ বরাবর স্টিলের স্প্যান তৈরির জন্য দ্বিতীয় নকশা তৈরি ও অনুমোদন করতে গিয়ে নির্মাণকাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। এতে ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে খেয়াঘাট ইজারাদাররা টোল আদায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে জনপ্রতি ১০ টাকা ও মোটরসাইকেলপ্রতি ৫০ টাকা হারে আদায় করছেন। অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছামতো। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছেন।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, কালিয়া উপজেলা সদরসহ এর পূর্বাঞ্চলের আটটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বাসিন্দাদের সঙ্গে জেলা সদর ও পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের মানুষের সড়ক যোগাযোগের ভোগান্তি কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২০১৭ সালে নবগঙ্গা নদীর বারইপাড়া খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য ৬৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের কালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্নের জন্য যশোরের মঈনুদ্দিন বাসি লিমিটেড নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের ৩১ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সময়সীমা পায়। পরে প্রতিষ্ঠানটি তিনবার সময়সীমা বাড়ায়।
দুই পাশের (প্রথম নকশার) কাজ শেষ করার সময় সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলে বলগেটের ধাক্কায় মাঝখানের পিলার ভেঙে পড়লে নকশা জটিলতা দেখা দেয়। নৌযান চলাচল নির্বিঘ্ন ও সেতুটি নিরাপদ করতে অতিরিক্ত ৬০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দিয়ে আবার দ্বিতীয় নকশা হিসেবে স্টিল স্প্যান নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন ঠিকাদার নিয়োগের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে সেতুটির নির্মাণ ব্যয় এখন ১২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে জেলা সদর ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে উপজেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
উপজেলার পার-বিষ্ণুপুর গ্রামের জ্বিলহজ খান বলেন, খেয়া পারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় রাতে নৌকা পাওয়া যায় না। ভোগান্তির শেষ নেই! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি– যত দ্রুত সম্ভব যেন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার ব্যবস্থা তিনি করেন।
সরকারি শহীদ অব্দুস সালাম ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী নোয়াগ্রামের বাসিন্দা বৃষ্টি ফাতেমা ও মিনহাজুল ইসলাম জানান, এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ শত শত মানুষ পারাপার হন। অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। এতে জনঅসন্তোষ বাড়ছে। খেয়া পারের সমস্যার কারণে তারা নির্দিষ্ট সময়ে স্কুল-কলেজেও যেতে পারেন না।
সেতুটি নির্মাণের অপেক্ষায় তারা তাকিয়ে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাঐসোনা গ্রামের সমাজকর্মী রাশেদ কামাল। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসাসহ অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না।
কালিয়া পৌরসভার মেয়র মো. ওয়াহিদুজ্জামান হীরা বলেন, স্বপ্নের সেতুর নির্মাণ শেষ হলে কালিয়ার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে। তিনি দ্রুত সেতু নির্মাণ শেষ করার দাবি জানান।
কালিয়ার ইউএনও রুনু সাহা বলেন, খেয়াঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ বলেন, সেতুর নির্মাণকাজে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব মানুষের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নকশা জটিলতা নিরসনের জন্য ইতোমধ্যে দ্বিতীয় স্টিল স্প্যানের নকশা তৈরি করা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, তারা প্রথম নকশার কাজ প্রায় শেষ করেছেন। নকশা জটিলতার কারণে পুরো কাজ শেষ করা যায়নি।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, নকশা জটিলতার কারণে সেতু নির্মাণের জন্য দ্বিতীয় স্টিল স্প্যান নকশা অনুমোদন করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছেন, ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে।
- বিষয় :
- কালভার্ট