ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বোরো ক্ষেতে হিট শক ব্লাস্ট সংক্রমণের শঙ্কা

বোরো ক্ষেতে হিট শক ব্লাস্ট সংক্রমণের শঙ্কা

বোরো ধানের ক্ষেতে ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন কৃষক মিল্টন শেখ। শনিবার ঝিনাইদহ সদরের কড়ইতলায়

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:৪৫

কৃষক আওলাদ আলী ও তাঁর বাবা মিলে ১০ বিঘা জমিতে এবার বোরো ধান আবাদ করেছেন। তাদের জমি পড়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি এলাকায়। ক্ষেতে ধানের অবস্থা ভালো হলেও গরমের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আওলাদ। গতকাল শনিবার তিনি বলেন, তীব্র গরমে ক্ষেতে ব্লাস্ট সংক্রমণ হতে পারে। এ জন্য কৃষি বিভাগের কর্মীরা তাদের ক্ষেতে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। 

তাপপ্রবাহের কারণে এরই মধ্যে দেশজুড়ে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে ঝিনাইদহের কৃষি বিভাগও। তারা বলছেন, তাপপ্রবাহ ধানে ব্লাস্ট সংক্রমণের জন্য উপযোগী। এ কারণে কৃষকদের সচেতন করতে কাজ করছেন তাদের মাঠকর্মীরা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৯০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৮৯ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে। কর্মকর্তারা বলছেন, তীব্র গরমে ধান ‘হিট শকে’ আক্রান্ত হতে পারে। এতে চিটার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হিট শক এড়াতে ধানগাছের গোড়ায় ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছত্রাকজাতীয় ব্লাস্ট রোগ চিকন জাতের ধানে সংক্রমণ হয় বেশি। ধানগাছে যখন ফুল ধরে, ধানের আকৃতি তৈরি হয় বা দুধ অবস্থায় থাকে, তখনই শিষ ব্লাস্টের সংক্রমণ বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে জেলার বেশির ভাগ মাঠেই ধান এমন অবস্থায় রয়েছে। শিষ ব্লাস্টের সংক্রমণ হলে গাছের গোড়া থেকে কোনো খাবার পায় না ধান। ফলে শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়। এতে শতভাগ পর্যন্ত ফলন বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থাকে। 

কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ব্লাস্ট সংক্রমণের সবচেয়ে উপযোগী পরিবেশ দিনের বেলায় তীব্র তাপদাহ, রাতে ঠান্ডা বা কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বর্তমানে প্রকৃতিতে এ রোগ সংক্রমণের অনুকূল পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ফলন বিপর্যয় রোধে এজক্সিট্রবিন ও ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিনের মিশ্রণ, ট্রাইসাইক্লাজলসহ অন্য গ্রুপের ছত্রাকনাশক ছিটাতে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ঝিনাইদহ সদরের সাধুহাটি এলাকার ধর্মতলায় কয়েকজন কৃষককে ব্লাস্ট সংক্রমণ বিষয়ে শনিবার পরামর্শ দিচ্ছিলেন কৃষি বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মেসবাহ আহমেদ। তিনি সাধুহাটি ব্লকের দায়িত্বে রয়েছেন। মেসবাহ আহমেদ বলেন, তারা মাঠে মাঠে কৃষকদের করণীয় বিষয়ে জানাচ্ছেন। এই কৃষকরাই অন্য কৃষকদের বোঝাতে পারবেন।
সদর উপজেলার বানিয়াকান্দরের কৃষক সাইদ হোসেনের জমি একই এলাকার কড়ইতলা মাঠে। সেখানে সবই চিকন জাতের ধান চাষ করেন। সাইদ বলেন, আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় এই ধানে রোগবালাই একটু বেশি হচ্ছে। তার ওপর যদি ব্লাস্ট সংক্রমণ হয়, তাহলে ফলন বিপর্যয় হবে। এতে তাদের লোকসান হয়ে যাবে। রোগটি সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিলে উপকৃত হতেন। 

একই মাঠে দুই বিঘা (৪৬ শতকের বিঘা) জমিতে ধানের আবাদ করেছেন মিল্টন শেখ। তাঁর ভাষ্য, ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি গড়ে ৩৫ মণ ধান পাওয়া যায়। তবে পানিনির্ভর আবাদে 
এমনিতেই ধানের পচা রোগ, কারেন্ট পোকা সংক্রমণ দেখা দেয়। ওষুধ দিলে তা নিয়ন্ত্রণেও থাকে। তবে ব্লাস্ট সংক্রমণ হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এমন অবস্থায় সতর্কতার সঙ্গে বিকেলে ক্ষেতের ধানে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী। তিনি বলেন, চলমান তাপদাহে হিট শক এড়াতে ধানের গোড়ায় ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে। এতে আর্দ্রতার ঘাটতি হবে না। তাদের সতর্কবার্তা মেনে চললে কৃষক ধানের ফলন ভালো পাবেন বলেও মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন

×