সাজেকে নিহত ৯: পাহাড়ি রাস্তায় অনভিজ্ঞ চালকের কারণেই দুর্ঘটনা
উপার্জনক্ষম সদস্য হারিয়ে অসহায় পরিবারগুলো

দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক। ফাইল ছবি
রাঙামাটি অফিস ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:৫৭
রাঙামাটির সাজেকে দুর্ঘটনাকবলিত মিনি ট্রাকটির চালকের আসনে ছিলেন অনভিজ্ঞ ব্যক্তি। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রাঙামাটির সহকারী পরিচালক উসমান সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, পাহাড়ের উঁচুনিচু ও আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গেলে অবশ্যই চালককে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে।
বুধবার উদয়পুর সীমান্ত সড়কে নব্বই ডিগ্রি নামক স্থানে শ্রমিকবাহী দ্রুতগামী পিকআপটি পাহাড়ের ১০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায়। এতে ৯ শ্রমিকের প্রাণ যায়। আহত হন ছয়জন। আহতদের দু’জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ও আহত পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। তা ছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন থেকে লাশ দাফন ও লাশ বহনের জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে মারা যান পাঁচজন ও খাগড়াছড়ি আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও চারজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ছয়জনই ময়মনসিংহের। তারা হলেন– ঈশ্বরগঞ্জের তোফাজ্জল হোসেন বাবলু (২১), নয়ন মিয়া (২২), মোহন মিয়া (১৬), আবু সাঈদ ওরফে শাহ্ আলম (২৮), এরশাদুল ইসলাম আশাদ (৩৫) ও গৌরীপুরের জাহিদ হাসান তপু (২৪)। অন্য তিনজন হলেন– কক্সবাজারের রামুর জসিম উদ্দীন (২৭) ও গাজীপুরের সাগর (২২) ও অলিউল্লাহ (৩৬)।
রাঙামাটি বিআরটিএর পক্ষ থেকে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় পড়া ট্রাকটি লংকা বাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের এসি মেসার্স আল আমিন এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন। গাড়িটির ফিটনেস সনদ রয়েছে। তবে চালক লাল মিয়ার কাছে তাৎক্ষণিক ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। তার বাড়ি কুড়িগ্রামে।
অন্যদিকে নিহতদের মধ্যে যাদের বাড়ি ময়মনসিংহে, তাদের প্রত্যেকেরই আলাদা সংসার রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তারাই ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হঠাৎ করে উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা তাদের পরিবার।
ঈশ্বরগঞ্জের তারুন্দিয়া ইউনিয়নের গিরিধরপুর গ্রামের শহিদুল্লার ছেলে আবু সাঈদ শাহ আলম (২৮)। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার। স্ত্রী ফেরসৌদী আহাজারি করে বলেন, ‘আমার সংসার কেলা চালাইব গো।’
তারুন্দিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুরজিথর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মোহন মিয়া (১৬)। তার বাবা নজরুল ইসলাম আহাজরি করতে করতে বলেন, ‘আমি আর কিছু চাই না গো, তোমরা আমার ছেলেরে আইন্যা দাও গো। সন্তানের লাশ কীভাবে আমি কাঁধে লইবাম গো।’ নিহতদের সবার পরিবারে একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
- বিষয় :
- ট্রাকে দুর্ঘটনা
- নিহত
- রাঙামাটি