ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা

বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা

ফুলবাড়ীর বুড়াচিন্তামনের মেলায় নিয়ে আসা ঘোড়া সমকাল

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:২৯

দুমকী, সিডর, দুর্বার, বিজলি, কিরণমালা, রানী, সুইটিসহ বাহারি সব নাম ঘোড়ার। ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট। পছন্দের ঘোড়া কিনতে চলে দরকষাকষি। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীর পদচারণায় এভাবেই মুখর হয়ে উঠেছে ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা। দরদাম ঠিক করার পর পাশের খেলার মাঠে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌড়।
তীব্র গরমের মধ্যেও বুড়াচিন্তামনের ঘোড়ার মেলা জমে উঠেছে। মাসব্যাপী এ মেলা ঘিরে এলাকাবাসীর আনন্দের কমতি নেই। আলাদীপুর ইউনিয়নে প্রায় ২০০ বছর ধরে বসে এ মেলা। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ৯ অথবা ১০ তারিখে শুরু হয় মাসব্যাপী এ আয়োজন। ১৩ বৈশাখ থেকে কেনাবেচার রসিদ কাটা হয়। মূল আয়োজন এক মাসের হলেও পশুর মেলা হয় ১০ দিন। ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয়।

আয়োজকরা বলছেন, দেশের অন্যতম ঘোড়া বেচাকেনার মেলা এটি। এ জন্য আট একর জমি নির্ধারিত আছে। এখানে মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রশস্ত মাঠে হাট বসে। তহশিল অফিস, ডাকঘর, সমবায় অফিস, ক্লিনিক, খেলার মাঠ ও ইউপি অফিসের কারণে জায়গাটি গুরুত্বপূর্ণ। ৭৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দছিম উদ্দীন মণ্ডল বলেন, মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়া নিয়ে আসেন বিক্রেতারা।
নওগাঁর ধামইরহাট থেকে এসেছেন গোলাম মোস্তফা (৫০)। তাঁর কাছে রয়েছে সবচেয়ে বেশি দামের ঘোড়া। ‘সম্রাট’ নামে ১২ বছর বয়সী লাল ঘোড়াটির দাম হাঁকছেন তিন লাখ টাকা। তিনি বলছিলেন, দুই লাখ পর্যন্ত দাম উঠেছে। এটি রেসের ঘোড়া, দ্রুত দৌড়াতে পারে। নিজেই এটির যত্ন নেন। তিনি ৪০ বছর ধরে এ মেলায় আসেন। নওগাঁর সাপাহার থেকে বারেক মোস্তাকিম মিয়া ১২টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন। গাইবান্ধা থেকে আসা সোহাগ ও ছমেজ উদ্দীন জানান, তারা ২৫ বছর ধরে মেলায় আসেন।
সওয়ারি আলম, সামছুল, রংপুর থেকে আসা রফিকুল ইসলামসহ ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, তাদের পূর্বপুরুষ এ মেলায় ঘোড়া কেনাবেচা করতেন। সেই সূত্রে তারাও পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। আগে বিস্তীর্ণ মাঠ থাকলেও এখন সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে বেচাকেনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় আলাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির অন্যতম সদস্য মো. নাজমুস সাকিব বাবলু বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এত বড়, পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই। মেলা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আবুল হাসান আজাদের ভাষ্য, ২০০ বছরের পুরোনো এ মেলা শুরু থেকেই ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ। স্বাধীনতার পরও নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঘোড়া এসেছে। সেসব এখন স্মৃতি হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেলায় ঘোড়া আনেন মালিকরা।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, প্রথমে মেলার অনুমোদন নিয়ে কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) মোহা. জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার ডিসি অফিস থেকে মেলার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে কেনাবেচার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন

×