ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

রাজশাহী-চাঁপাই-নওগাঁয় আমের ফলন নিয়ে শঙ্কা

খরায় ঝরে যাচ্ছে আমের গুটি, ফলন নিয়ে শঙ্কা

ফাইল ছবি

 সৌরভ হাবিব, রাজশাহী

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:০৩ | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ০৯:২৭

রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারিপুর গ্রামের মুক্তার আলীর সাত বিঘা জমিতে শতাধিক আমগাছ রয়েছে। ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, ফজলি, কিষাণভোগসহ নানা জাতের আম। গত বছর ২ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছিলেন তিনি। অথচ এবার গাছে তেমন আম নেই বললেই চলে। মুক্তার আলী বলেন, এই সামান্য আমের জন্য গাছে কীটনাশক দিলে শ্রমিক খরচ বা কীটনাশকের দাম কোনোটাই উঠবে না। তীব্র খরায় গাছের গোড়া শুকিয়ে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। কিন্তু সেচ যে দেব, তার খরচও এবার উঠবে না। তাই তিনি এবার গাছের কোনো পরিচর্যা করছেন না।

একই অবস্থা আমপ্রধান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয়। এই তিন জেলার কোথাও এবার বাগানগুলোয় সন্তোষজনক আম নেই গাছে। যা নিয়ে হতাশ চাষিরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ শীতের পর তীব্র তাপদাহ আমের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে তাপমাত্রা থাকছে ৩৮ ডিগ্রির ওপরে। এই তাপ ক্ষতি করছে আমের ফলনের।

গত বৃহস্পতিবার পবার মুরারিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি আমবাগান। গ্রামের আমচাষি মাসুদ হোসেন জানান, তাঁর দেড় বিঘা জমিতে ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতিসহ নানা জাতের ১৫টি গাছ আছে। গত বছর ৭০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছেন। এবার গাছে আমই নেই। দুটি গাছে সামান্য কয়েকটা ল্যাংড়া আম আছে। এটা নিজের পরিবারেরই হবে না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) সাবিনা বেগম বলেন, ‘এ বছর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬০ টন আমের ফলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুকুল অনেক কম এসেছে। শীতের কারণেই মূলত মুকুল কম হয়েছে। গত বছরের তুলনায় আম এবার অনেক কম। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা এবং পরিচর্যার অভাবেই এমন হয়েছে।’ 

রাজশাহী ফল গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর শীত দীর্ঘ সময় থাকায় গাছগুলো বিশ্রামে চলে যায়। এ কারণে অনেক গাছে মুকুল আসেনি। তবে সব এলাকায় যে আম নেই, এমনটা নয়। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন খুব খারাপ হবে না। তবে পরিচর্যা করতে হবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি এ কে এস রোকন জানান, এ বছর জেলার বাগানগুলোয় গাছে মুকুল এসেছিল প্রায় ৬০ ভাগ। সেই অল্প মুকুল নিয়েও চাষিরা আশাবাদী হয়েছিলেন। সম্প্রতি চৈত্রের বৃষ্টিতে ঝরে গেছে এসব আমের মুকুল। ফলে পর্যাপ্ত গুটি আসেনি গাছে। জানা গেছে, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ, যা গত বছরের তুলনায় ২৫ হাজার টন বেশি। তবে মাঠ পর্যায়ের চিত্র একেবারে ভিন্ন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, ‘জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় শিবগঞ্জে। কিন্তু এবার শিবগঞ্জে আমের অবস্থা খুবই খারাপ। চাষিদের আম বিক্রি করে কীটনাশকের খরচ উঠবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এবার আমবাগানে রোগবালাইও বেশি। এই রোগবালাইয়ের কারণে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, ‘যেহেতু গত বছর আমগাছে প্রচুর মুকুল ছিল, তাই এ বছরকে অফ সিজন বলা যায়। তবে শীতের প্রকোপে, কয়েক দিন আগে ঘন কুয়াশা এবং অসময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফলন বিপর্যয় কিছু হবে। বিশেষ করে বড় গাছে আমের ফলন একেবারেই কমে যাবে।’

নওগাঁ সংবাদদাতা কাজী কামাল হোসেন জানান, জেলায় বিগত দিনে আম উৎপাদনে নওগাঁ দেশের শীর্ষস্থানে অবস্থান করলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত এক সপ্তাহের তাপপ্রবাহে জেলার আমচাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারা বলছেন, এ বছর এমনিতে বিগত বছরের তুলনায় গাছে মুকুল অনেক কম, তার ওপর বৃষ্টি না হওয়ায় তাপপ্রবাহ ও খরায় কুঁকড়ে যাচ্ছে পাতা, ঝরে পড়ছে আমের গুটি।

যদিও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকলে আমরা যে তাপমাত্রা রেকর্ড করি না কেন, এর চেয়ে অনেক বেশি তাপ অনুভূত হবে। এখন বাতাসে আর্দ্রতা কম, তাপমাত্রা বেশি। তবে বর্তমান তাপমাত্রায় আমের ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই কৃষকের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। অতিরিক্ত খরায় চাষিদের গাছে সময়মতো পানি দেওয়া এবং মাঝেমধ্যে আমের বোঁটা এবং পাতায় পানি স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া বোরন সার এবং জিঙ্ক মিশিয়ে গাছে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যে পরিমাণ মুকুল আসে এবং গুটি হয়, তার ১ শতাংশও যদি টিকে থাকে, তাহলে গাছ সেটা বহন করতে পারবে না। সুতরাং কী পরিমাণ মুকুল এসেছে, তার চেয়ে বিবেচ্য বিষয় গাছের পরিচর্যা। প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে, তাহলে ফলন বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’

আরও পড়ুন

×