ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ট্রাক্টরে বেহাল সড়ক, বাড়ে ব্যয়

ট্রাক্টরে বেহাল সড়ক, বাড়ে ব্যয়

সাদুল্লাপুরের উত্তর কাজীবাড়ী সন্তোলায় ট্রাক্টর থেকে মাটি নামিয়ে সড়কের পাশে রাখা হচ্ছে সমকাল

শাহজাহান সোহেল, সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা)

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৪ | ২৩:৫৯

সাদুল্লাপুর ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের পাশ দিয়ে চলে গেছে প্রধান বাইপাস সড়কটি। এটি চার মাস আগে সংস্কার করা হয়। তবে অবাধে ট্রাক্টর চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে পিচঢালাই। স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজার রহমানের ভাষ্য, এ সড়ক চার বছরের আগে আর সংস্কার হবে না বলে উপজেলা প্রকৌশলী জানিয়েছেন। সে জন্য ট্রাক্টর চলাচল বন্ধে বাধা দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
এভাবে অবৈধ বাহন হিসেবে পরিচিত ট্রাক্টর উপজেলাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাঁচা-পাকা সড়ক। এসব সংস্কারে চলতি অর্থবছরে সরকারি দুটি দপ্তরের ব্যয় হবে অন্তত সাড়ে ৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকৌশল অফিসের আড়াই আর প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের প্রায় ৬ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা জানান, ট্রাক্টর চলাচল না করলে সংস্কার ব্যয় কমানো যেত। যদিও পুলিশ বলছে, ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার ১০ থেকে ১২টি স্থান থেকে কৃষিজমির মাটি কেটে ও বালু  উত্তোলন করে পরিবহন করা হয় ট্রাক্টরে। ইদিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান সরকার বলেন, ট্রাক্টরের কারণে সড়কে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ধুলোবালুতে ভরে যাচ্ছে শরীর।

অবৈধভাবে মাটি ব্যবসায় জড়িতদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, সবাই ম্যানেজড। সংবাদ লিখেও বন্ধ হবে না। প্রভাবশালী আর সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় চলছে ব্যবসা। সে কারণে এক্সক্যাভেটরে মাটি কাটা, বালু উত্তোলন আর ট্রাক্টর চালানো যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে অবৈধভাবে মাটি কাটা শুরু হয়। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থানের মাটি কিনে পরিবহন করেন ট্রাক্টরে। ইট ও বালুও বহন করা হয়। ট্রাক্টরচালক আব্দুল হামিদ মিয়ার ভাষ্য, সবাইকে ম্যানেজে রেখেই ট্রাক্টর চলে। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন সেবা দেওয়া হয়। নির্বাচনের সামগ্রী বহনেও ট্রাক্টর দিতে হয়। তাই গোপনে তারাও সহায়তা করেন।

ট্রাক্টরের বড় চাকায় সড়কের দ্রুত ক্ষতি হয়। এগুলো চলাচল না করলে সংস্কার ব্যয় কমত বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী মো. মেনাজ। তিনি বলেন, এ উপজেলায় ৫৮২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাকা ২১৫ কিলোমিটার। চলতি অর্থবছর এ সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ পাওয়া গেছে আড়াই কোটি টাকা। এসব চলাচল বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় প্রতি বছর ব্যয় বাড়বে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে উপজেলার বিভিন্ন স্পটে ৯ মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে জরিমানা আদায় হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এক মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে হারুন মিয়া নামে একজনকে। আদালতের নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, এসব অভিযানের পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা থেমে নেই। রাতের অন্ধকারে নামেন তারা। ট্রাক্টরে মাটি ভরে সরবারাহ করেন বিভিন্ন স্থানে।

সড়ক সংস্কারসহ অন্য কাজ মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে উপজেলায় ৩৮৯টি প্রকল্পের কাজ হবে বলে জানান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এতে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। গ্রামীণ সড়ক দ্রুত নষ্ট হওয়ায় ব্যয় বাড়ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সিন্ধান্ত নিতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায়, তাদের মাধ্যমে কোনো সড়কের কাজ শেষে হলে তিন বছর আর সংস্কার করা যায় না। তবে বছর না যেতেই সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উপজেলা পরিষদের অনুমতিতে ফের কাজ করতে হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সড়ক সংস্কারে নিয়মের ব্যত্যয় হয়। কারণ এগুলো দ্রুত সংস্কার না করলে মানুষের চলাচলে সমস্যা হবে। তাই এটি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতি বছর এমন প্রকল্প বেশি হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, জমির উপরিভাগের মাটি কাটলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। জমির প্রথম ছয় ইঞ্চি উর্বর মাটি। এটি কেটে নিলে তিন থেকে চার বছর ফসল ফলানো কষ্টকর হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক। কিন্তু একটি চক্র কৃষককে ভুল বুঝিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া বলেন, এ চক্রকে দমানো না গেলে ফসল উৎপাদন কমবে।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু কামাল বলেন, পরিবহন সংকটের কারণে নির্বাচনের মালপত্র ট্রাক্টরে বহন হয়। তখন নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তবে এখন ট্রাক্টরবিরোধী অভিযান চলছে। আর ওসি শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন করে ট্রাক্টরে বহন অবৈধ। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বাহন চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 
ট্রাক্টর কৃষি জমিতে চাষাবাদে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু সেগুলো সড়কে চালিয়ে রাস্তা নষ্ট করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সচেতন হলে সড়কে ট্রাক্টর নামতে পারবে না বলে মনে করেন ইউএনও কাওছার হাবিব। তিনি বলেন, এ বাহন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতে গ্রামে বেশি চলে। এগুলো আটকে সহকারী কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

×