ভিক্ষার জন্য শিশুকে তুলে নেয় তারা

আট মাস বয়সী আব্দুল্লাহ আল নোমানকে কোলে করে মা মনিরা আক্তার সমকাল
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪ | ০০:৪৪
‘আমার বুকটা ঠান্ডা হইয়া গেছে। আমি আর কিছুই চাই না। আমার পৃথিবী আমার বুকে ফিরা আইছে।’ আট মাসের ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমানকে বুকে জড়িয়ে এভাবেই অনুভূতি জানাচ্ছিলেন মা মনিরা আক্তার রুমা। ২৮ দিন পর আদরের মানিককে ফিরে পেয়ে কথা ধরে আসছিল তাঁর।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে দেখা যায় মাতৃস্নেহের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্যটি। এদিন ভোরে নোমানকে ময়মনসিংহ শহরের ফুটপাত থেকে উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করতে থাকা আইরিন আক্তার নামে এক নারীকে।
পুলিশ জানায়, মানুষের সহানুভূতি আদায়ের জন্য শিশু কোলে নিয়ে ভিক্ষা করার জন্যই নোমানকে অপহরণ করে একটি চক্র। দুর্বল করার জন্য আইরিন সুস্থ-সবল শিশুটির হাতের পাঁচটি আঙুলই গরম পানিতে পুড়িয়ে ফেলে। এ ঘটনায় আইরিনের স্বামী আবু সাঈদ সুমনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
গাজীপুর মহানগরের নাওজোড় এলাকার ভাড়া বাসা থেকে নোমান হারিয়ে যায় গত ৩ এপ্রিল। ওই বাসায় নোমানকে বিছানায় শুইয়ে রেখে তার মা মনিরা আক্তার রুমা গোসলখানায় ঢুকেছিলেন। বেরিয়ে সন্তানের দেখা পাননি। তাঁর স্বামী পোশাক কারখানার কর্মী মোক্তার হোসেনের বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচরে। পাশের কক্ষে আবু সাঈদের সঙ্গে থাকত কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার অন্তপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে মোসা. আইরিন আক্তার। ওই বাসা ভাড়া নেওয়ার পর থেকেই মনিরার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে সে। কৌশলে শিশুটিকে আদরযত্নও করত। একপর্যায়ে ৩ এপ্রিল নোমানকে নিয়ে পালিয়ে যায় আইরিন। এ ঘটনায় মহানগরের বাসন থানায় মামলা হয়।
বৃহস্পতিবারই নোমানকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাবা মোক্তার হোসেন বলেন, তিন সন্তানের মধ্যে নোমান ছোট। তাঁর ছেলেকে দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হয়েছে। এতে হাড্ডিসার হয়ে গেছে শিশুটি।
মনিরা আক্তার রুমা বলেন, ‘আমার কইলজাডারে ওরা কঙ্কালের মতো কইরা ফালাইছে। গরম পানিতে হাত পোড়ায়া ফালাইছে।’ এই চক্রের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন মোক্তার-মনিরা দম্পতি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো. শামছুর রহমানের ভাষ্য, শিশুর খোঁজে ছদ্মবেশে নানা জায়গায় যান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হক। নোমানকে কোলে করে আইরিন রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ ব্যস্ততম এলাকায় ভিক্ষা করছে– এমন তথ্য পাওয়া যায়। অবশেষে বৃহস্পতিবার ভোরে ময়মনসিংহের চায়না মোড় থেকে এসআই নাজমুল আইরিনকে গ্রেপ্তার করেন। এর পর উদ্ধার করা হয় নোমানকে।
নাজমুল হক বলেন, স্বামী মারা গেছে, শিশুপুত্রকে নিয়ে থাকার জায়গা নেই, ছেলেটাও অসুস্থ– এমন গল্প বানিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিল আইরিন। এ জন্য নোমানের বাম হাতের আঙুলগুলো গরম পানি ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
- বিষয় :
- ভিক্ষা