ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

মাটিবোঝাই ট্রাক ঢুকে পড়ল ঘরে

মাটিবোঝাই ট্রাক ঢুকে পড়ল ঘরে

সাটুরিয়ার বালিয়াটি পুরাতন বাজারের আমাজ উদ্দিনের ঘরে রোববার রাতে ঢুকে পড়া ট্রাক সমকাল

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪ | ০০:৪৩

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেন স্বামী-স্ত্রী। তারা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তখন রাত ২টা। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। চলন্ত সিলিং ফ্যান খুলে পড়ে শরীরের ওপর। মনে করেছিলেন ঝড়ে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। পর মুহূর্তেই ভুল ভাঙে। তাকিয়ে দেখেন মাটিবোঝাই ড্রাম ট্রাক তাদের ঘরের ভেতর ঢুকে গেছে।  

উপজেলার মুন্সিচর গ্রামের পণ্ডিত আলীর জমি থেকে নিষিদ্ধ ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছিলেন আলামিন, বাবুসহ কয়েকজন। রোববার রাতে বালিয়াটি পুরাতন বাজারসংলগ্ন সেতুর ঢালে চলন্ত ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে আমাজ উদ্দিনের বসতঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দেয় অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক। দুমড়েমুচড়ে যায় চারচালা টিনের ঘর। ঘরের ভেতরের সব আসবাব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এ সময় বাড়ির মালিক আমাজ উদ্দিন আহত হন। চালক গাড়ি থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়।

আমাজ উদ্দিন জানান, প্রতি রাতেই গ্রামের এই সরু পথ দিয়ে মাটিখেকোরা ২৫ থেকে ৩০টি গাড়ি দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে ভাটারা ইটভাটায় দেয়। গাড়ির শব্দে অনেক সময় রাতের বেলায় ঘুম আসে না। যারা এ নিষিদ্ধ গাড়ি চালায়, তারা অনেকেই রাতের বেলায় নেশা করে গাড়ি চালায়। মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে কথা বললে হামলা ও মামলার হুমকি দেয় তারা। অল্পের জন্য তিনি ও তাঁর স্ত্রীসহ তিন গবাদি পশু রক্ষা পেয়েছে। তাঁর বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম হোসেনের নাম ভাঙিয়ে এসব গাড়ি চালান মো. আলামিন ও বাবু। বালিয়াটি ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে মাটি কাটা হয় শামীমের নামে। ছাত্রলীগের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। 

এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম হোসেন বলেন, ওই বাড়ির মালিকের ঘরে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা হবে। তবে মাটি কাটার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি মাটির ব্যবসা করেন না। কেউ হয়তো তাঁর নাম ভাঙিয়ে এ কাজ করতে পারে। তবে তারা যেই হোক না কেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বাবুর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খুদে বার্তা দিলেও সাড়া মেলেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, উপজেলার প্রতিটি মাটিকাটার স্থান থেকে পুলিশ টাকা নেয়। পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই এসব অবৈধ যান রাতের বেলায় সড়কে দাপিয়ে বেড়ায়। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না। তারা বলেন, সরকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সড়ক তৈরি করে। এসব যান চালিয়ে সেই সড়ক নষ্ট করে মাটিখেকোরা। এর জন্য উপজেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে দায়ী করেন তারা। 
পুলিশের নিয়ন্ত্রণে মাটির ট্রাক চলাচলের বিষয়টি অস্বীকার করে সাটুরিয়া থানার ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, রাতের বেলায় অনেক গাড়িই চলাচল করে থাকে। যারা মাটি কাটে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
 

আরও পড়ুন

×