বাঞ্ছারামপুর
খালে বাঁধ, বৃষ্টিতে বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের নিজকান্দি গ্রামে খালে বাঁধ দিয়ে ইটভাটায় মাটি পরিবহন। ছবি: সমকাল
বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ১২:১৭ | আপডেট: ১১ মে ২০২৪ | ১২:৩৫
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের একটি খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ইটভাটায় মাটি বিক্রি করতে বাঁধটি নির্মাণ করেন সাইদুল ইসলাম নামে এক বালু ব্যবসায়ী। এই বাঁধের কারণে খালের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হলেই ক্ষেতের বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চার গ্রামের প্রায় সাতশ কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরদাবাদ ইউনিয়নের নিজকান্দি গ্রাম থেকে উৎপন্ন হয়ে একটি খাল কলাকান্দি, চর লৌহনিয়া, তিলকান্দি, গাওরাটুলি হয়ে তিতাস নদীতে পতিত হয়েছে। এই খালের পানি দিয়ে জমিতে সেচের চাহিদা পূরণ করেন এলাকার কৃষক। বর্ষা শেষে এই খাল দিয়ে পানি তিতাস নদীতে চলে যায়। কিন্তু বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার তৈরি হচ্ছে। এই বিলে বোরো ধান চাষ করেন তিলকান্দি, নিজকান্দি, কলাকান্দি ও চরলৌহনিয়া গ্রামের প্রায় সাতশ কৃষক। পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন তারা। বাঁধের কারণে খালে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। আবার ভারী বৃষ্টিপাত হলে জমির পাকা ধান তুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক।
সরেজমিন দেখা গেছে, ইটভাটায় মাটি পরিবহন ট্রাক্টর চলাচলের জন্য তিলকান্দি গ্রামের খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। খালের অনেক জায়গা দখল করে রাস্তা বানানো হয়েছে। বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ। খালের পশ্চিম অংশে জমে আছে অনেক পানি। বিলের অনেক বোরো ক্ষেতেও ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি। আবার বৃষ্টি হলে তলিয়ে যেতে পারে বিলের ধান।
নিজকান্দি গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সারা বছর কষ্ট করে ধান করলাম, এখন বাড়িতে নেব। কিন্তু ধান গোলায় তোলা নিয়ে ভয়ে আছি, খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি জমে গেছে। আবার একটু বৃষ্টি হলে আমার জমি তলিয়ে যাবে। এ জমির ধানে আমার সারা বছরের চালের চাহিদা পূরণ হয়। এটা বাড়িতে না নিতে পারলে না খেয়ে থাকতে হবে।’
কলাকান্দি গ্রামের কৃষক শাহ আলম জানান, কয়েক মাস ধরে খালে বাঁধ দিয়ে ইটভাটায় মাটি নিচ্ছে সাইদুল ইসলাম। নায়েব (তহশিলদার) কয়েকবার এসেছেন এখানে; কিন্তু খালের বাঁধ অপসারণ হয়নি। বৃষ্টির পানি এমনই জমে আছে, আর একটু বৃষ্টি হলেই ক্ষেতের পাকা ধান তলিয়ে যাবে। এই জমি তলিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়তে হবে।
খালে বাঁধ নির্মাণকারী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খালে বাঁধ দিয়েছিলাম ইটভাটায় মাটি দিতে। এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) একবার আমাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন, আর এই বাঁধ অপসারণ করতে বলেছেন। কিন্তু মাটি আনা শেষ না হওয়ায় এখনও বাঁধ কেটে দিতে পারিনি।’
ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম জানান, তিলকান্দি গ্রামে খালে বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি শুনেছেন তিনি। এই বাঁধের কারণে পানি সরতে পারছে না। এখন তো ধান কাটার মৌসুম, পানি যদি বেড়ে যায় তাহলে তো ধানের জমি তলিয়ে যাবে। ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সলিমাবাদ ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের ভাষ্য, খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে সাইদুলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তখন তিনি বলেছিলেন, বাঁধ অপসারণ করবেন। এখনও বাঁধ অপসারণ করে না থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। খালে বাঁধ দিয়ে থাকলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
- বিষয় :
- বাঞ্ছারামপুর
- বৃষ্টি