সালথা
ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

সালথার যদুনন্দি ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামে রিপন ফকিরের জমিতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। বুধবারের ছবি: সমকাল
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ১২:৪৭ | আপডেট: ১১ মে ২০২৪ | ১২:৪৯
ফরিদপুরের সালথায় অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে জমির উর্বর মাটি কেটে ইটভাটাসহ জমি ভরাট কাজে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।
জানা গেছে, এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষিজমি তিন ফসলি। এখানে সোনালি আঁশখ্যাত পাট, পেঁয়াজ ও আমন ধান আবাদ করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকদের থেকে মাটি কিনে তা ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, উপজেলায় কয়েকটি শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। এরা দরিদ্র কৃষককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জমির মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে নগদ অর্থ পেতে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে। এসব জমিতে ফসল বা মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষিজমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রলি গাড়ি। এসব ট্রলির কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তাঘাটে খানাখন্দ তৈরি হয়ে দ্রুত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ট্রলি চলাচলের কারণে আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, যদুনন্দি ইউনিয়নের খাড়দিয়া গ্রামের অবুঝ মিয়া নামে এক মাটি ব্যবসায়ী খাড়দিয়া এলাকায় রাতের বেলা এক্সক্যাভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটছেন। কেটে নেওয়া মাটি ট্রলিতে করে কাছের ইটভাটায় পাঠানো হচ্ছে। একই ইউনিয়নের সাধুহাটিতেও ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক দেখা গেছে। এ ছাড়া ভাওয়াল ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামে দিনের বেলা ফসলি জমির মাটি কাটতে দেখা গেছে। এসব মাটি পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৮ থেকে ১০টি ট্রলি। একই ইউনিয়নের কামদিয়া গ্রামেও এক্সক্যাভেটর দিয়ে আবাদি জমির টপ সয়েল কাটতে দেখা গেছে। আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, নুরুল ইসলাম নামে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাওয়াল ইউনিয়নের নারানদিয়ায় সাহেব আলী, যদিনন্দি ইউনিয়নের খাড়দিয়া এবং সাধুহাটিতে অবুঝ মিয়া ও রিপন ফকির, মাঝারদিয়া ইউনিয়নের খলিশপট্টিতে শানাল ও রাসেল, বল্লভদী ইউনিয়নের পিসনাইলে সুজন, সোনাপুর ইউনিয়নের মিনাজদিয়ায় মুরাদ ও সিরাজ, গট্টি ইউনিয়নে সাখাওয়াতসহ অনেকেই মাটি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এসব ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার খবর পেলেই তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান ও আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে চলতি বছরও একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোষীদের অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়া চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।