ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

রেকির পর গাড়ি নিয়ে এসে গরু চুরি

রেকির পর গাড়ি নিয়ে এসে গরু চুরি

প্রতীকী ছবি

বিপুল দাশ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪ | ২৩:১৫

অন্যের বাড়ি কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন হেঞ্জু মিয়া। খেয়ে না খেয়ে সামান্য সঞ্চয় করেন। এর সঙ্গে আরও ৩০ হাজার টাকা ধার করেন গরু কেনার জন্য। চলতি বছরের মার্চে ৮৮ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় কেনেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকার এই বাসিন্দা। গত ৫ এপ্রিল বাড়ির পাশে রাখা গরুটি একটি সাদা প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায় চোরেরা। শেষ সম্বল হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন হেঞ্জু মিয়া।

সাম্প্রতিক সময়ে গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় হেঞ্জু মিয়ার মতো প্রান্তিক মানুষ ও দরিদ্র কৃষকের ঘুম হারাম। অনুসন্ধানে দেড় মাসে অন্তত ১৫টি গরু চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এর পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। বেশির ভাগ ভুক্তভোগীই হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগ দিতে যান না।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, দিনের বেলা গরু চুরির জন্য দুর্বৃত্তরা প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে। কিছুদিন তারা এলাকা ঘুরে পর্যবেক্ষণ করে। সময়-সুযোগ বুঝে এসব যানবাহনে করে গরু তুলে নিয়ে যায়। মধ্যরাত ও ভোরে যেসব চুরি হচ্ছে– এগুলোর বেশির ভাগই পিকআপে করে হচ্ছে বলে তাদের ভাষ্য। এ জন্য গ্রামীণ এলাকায় এসব যানবাহন চলাচলে নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেন তারা।

সর্বশেষ ৮ মে ভোরে খইয়াছড়া ইউনিয়নের মসজিদিয়া ও মায়ানী ইউনিয়নের ছাগলখাইয়া এলাকা থেকে পাঁচটি গরু চুরি যায়। এর মধ্যে মসজিদিয়া গ্রামের মানিক দাসের একমাত্র গাভীটি ছিল অন্তঃসত্ত্বা। তিনি বলেন, কিছুদিনের মধ্যে বাছুর হতো। কৃষিকাজের পাশাপাশি গরুর দুধ বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালান। ওই গাভির দুধও বিক্রির আশা করছিলেন।
ওই দিন ছাগলখাইয়ার মো. শাহজাহানের চারটি গরু চুরি যায়। ৭ এপ্রিল হিংগুলীর উজ্জ্বল সেনের গরু দিনের বেলা চুরি যায়। ১২ এপ্রিল ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ডাকঘর এলাকার মো. হাশেমের গোয়াল থেকে চারটি গরু নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই মাসেই খইয়াছড়া ইউনিয়নের নিচিন্তা এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা গাভি জবাই করে মাংস লুটে নেয় একটি চক্র।

২৯ মার্চ খইয়াছড়ার ছড়ারকুলের আকাশ মিয়ার গোয়াল থেকে চুরি যায় দুটি গরু। এগুলোর আনুমানিক মূল্য দেড় লাখ টাকা। আকাশ জানান, এক সময় প্রবাসে ছিলেন। অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরে একটি গরু পালন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে বেড়ে তিনটি হয়। দুধ বিক্রির টাকায় সংসার চালানোর পাশাপাশি ওষুধের জন্যও খরচ করেন।
একই দিন সকালে বাড়ির পাশে মাঠে গরু বেঁধে রেখেছিলেন ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়ার মো. আরাফাত হোসেন। আধা ঘণ্টা পর বাড়ি থেকে সেখানে গিয়ে গরুটি পাননি। কাটাছড়া ইউনিয়নের উত্তর কাটাছড়া গ্রামের স্বপন দাস ৭ মার্চ বাড়ির পাশের মাঠে গরু বেঁধে জমিতে কাজ করতে যান। ঘণ্টা দুয়েক পরে ফিরে ওই গরু আর পাননি।

মায়ানী ইউনিয়নের মায়ানী এলাকার জহিরুল ইসলাম, মসজিদিয়া গ্রামের আবুল কাশেম ও কাজল দাস বলেন, গরু চুরি ঠেকাতে কৃষকরা গোয়াল পাহারা দেয়। কিন্তু প্রতি রাতে জেগে থাকাও সম্ভব নয়। পাহারা দেওয়া বন্ধ করলেই গরু নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। তাদের আশঙ্কা, আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এমন চুরি আরও বাড়তে পারে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই চক্রটিকে আইনের আওতায় আনার দাবি করেন তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১৮ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া এলাকা থেকে লাল রঙের প্রাইভেটকার আটক করে একটি গরু উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার বেলাল হোসেনকে (২৫)। পুলিশের মামলায় সে ছাড়াও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়ার আবিরুল ইসলামকে আসামি করা হয়। বেলালকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
এ ঘটনার পর তিন-চার মাস গরু চুরির তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি। এ কারণে স্থানীয়দের ধারণা, একটি চক্রই এতে জড়িত। বেলালের জামিনে ছাড়া পাওয়ার কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তবু দেড় মাসে ফের গরু চুরি বাড়ায় স্থানীয়রা বলছেন, ওই চক্রটিই ফের সক্রিয় হয়েছে।
খইয়াছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যদের মাধ্যমে এলাকায় সচেতনতামূলক বেশ কয়েকটি সভা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ গরু চুরি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। তাই ধারাবাহিক পাহারার মাধ্যমে গরু চুরি রোধ করার পরামর্শ দেন।
মিরসরাই থানার ওসি শহীদুল ইসলাম গতকাল সোমবার সমকালকে বলেন, গরু চোর সন্দেহে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেননি। তাঁর দাবি, রাতে সব এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

×