দখল-দূষণে মৃতপ্রায় খাল

মির্জাপুর উপজেলার বারোখালী খাল দখল করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা সমকাল
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪ | ০০:১৫
মির্জাপুরের বংশাই ও লৌহজং নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী বারোখালী খালটি দখল-দূষণে বিলীন হতে চলেছে। দখলের কারণে অনেক জায়গায় খাল অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র স্থান এই খাল। খালটি দখলমুক্ত ও সচল করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মির্জাপুর থানার পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত উত্তরের বংশাই ও দক্ষিণে লৌহজং নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী একটি খাল বারোখালী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার এবং প্রস্থ গড়ে ১২৬ ফুট। খালটি এক সময় খরস্রোতা ছিল। বছরের পুরো সময়ই খাল দিয়ে নৌকা চলাচল করত। উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ নৌকাযোগে এই খাল দিয়ে মির্জাপুর সদরের হাটে আসতেন সওদা করতে। আশির দশক থেকে খালটির দুই পাড় দখল হতে শুরু করে। দখল হওয়া বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে বড় বড় স্থাপনা। দখল হতে হতে বর্তমান প্রশস্ত এতটাই কমে গেছে, যেন বিভিন্ন স্থানে মনে হবে এটি একটি ড্রেন (নালা)। এ ছাড়া বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলায় খালের গতিপথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মির্জাপুর বাজারের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ এই বারোখালী খাল। কিন্তু দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে আসছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে খালটি এক সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে। খালটি দখলমুক্ত ও সচল হলে শহরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হবে। একটু বৃষ্টি হলে মির্জাপুর বাজারের প্রধান প্রধান রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেক সময় লেগে যায়। মির্জাপুর বাজারকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য এই খালটি দখলমুক্ত ও খননের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা সদরের বাইমহাটি গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন, ‘আমরা এই খালটিতে চৈত্র মাসেও পানি দেখেছি। দখল হতে হতে এখন এটি আর খাল নেই। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে খালটি থাকবে না। কর্তৃপক্ষের এদিকে নজর দেওয়া দরকার।’
মির্জাপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক সিদ্দিকী জানান, খালটি মির্জাপুরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর গতিপথ সচল করা জরুরি। তা না করলে অদূর ভবিষ্যতে মির্জাপুর বাজারের রাস্তাঘাট জলাবদ্ধ হয়ে নোংরা পানিতে নিমজ্জিত হবে। ময়লা-আবর্জনায় জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান বলেন, খালটি দখলমুক্ত ও সচল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংসদ সদস্য এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। অচিরেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে খালটি দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ বলেন, ‘মির্জাপুর শহরের জন্য এই বারোখালী খালটি গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্ব বিবেচনা করেই খালটি দখলমুক্ত ও সচল করতে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই খালটি মির্জাপুর শহরের জন্য অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ হবে।’
- বিষয় :
- খাল ভরাট