ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

এবার দেশীয় শিং মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন 

পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত সম্ভব হবে, শনাক্ত হবে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য দায়ী জিন 

এবার দেশীয় শিং মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন 

ফাইল ছবি

বাকৃবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪ | ২০:৫০

জাতীয় মাছ ইলিশের পর এবার দেশীয় জাতের শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের (জীবনরহস্য উন্মোচন) দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। বুধবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে সংবাদ সম্মেলনে গবেষক দল বিষয়টি তুলে ধরে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম। গবেষণা দলে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ, স্বর্ণা, জেসমিন, কানিজ ও সারা।

জিনোম হলো, প্রাণী বা উদ্ভিদের বংশগত বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জিনোমে নিউক্লিওটাইডগুলো কীভাবে বিন্যস্ত আছে, তা লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় জিনোম সিকোয়েন্সিং বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন এবং পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণ গবেষণার ফল উপস্থাপন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সরদার, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, প্রক্টর অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম প্রমুখ। 

গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম। তিনি জানান, স্ত্রী শিং মাছের বৃদ্ধি পুরুষ শিং মাছ অপেক্ষা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়। এই মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন অন্যতম একটি উপায়। সফলভাবে এই প্রকার শিং মাছ উৎপাদনের জন্য লিঙ্গ নির্ধারণকারী জিন শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। সে ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে শিং মাছের জিনোম নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।

ওই গবেষক জানান, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশীয় শিং মাছের ৮টি পরিবারের প্রায় ৮০০ পোনার নমুনা নিয়ে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোম সিকোয়েন্সিং করে জিন শনাক্তকরণের কাজ করা হয়। সর্বাধুনিক জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ও সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে বায়োইনফরমেটিকস অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে এটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে অর্থায়ন করে জাপান সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অব সায়েন্স (জেএসপিএস)। 

গবেষণার ফল সম্পর্কে প্রধান গবেষক জানান, গবেষণায় প্রাপ্ত জিনোম সিকোয়েন্স থেকে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে শুধু স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা যাবে। এতে করে প্রাকৃতিক জলাশয় ছাড়াও কৃত্রিম পদ্ধতিতে অধিক ফলনশীল স্ত্রী শিং মাছ চাষ করা সম্ভব হবে। শিং মাছের জিনোম থেকে শুধু পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ নির্ধারণকারী জিন ছাড়াও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন– বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণেও এই জিনোম সিকোয়েন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

প্রধান গবেষক ড. তাসলিমা জানান, গবেষণার ফল চলতি বছরের মার্চে জাপানিজ সোসাইটি অব ফিশারিজ সায়েন্স আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। ওই বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এটি ‘কনফারেন্স পেপার’ হিসেবে প্রকাশিত হয়। গবেষণাটির উপাত্ত সম্মেলনে উপস্থিত আন্তর্জাতিক মানের ৩০০ বিজ্ঞানীর অনুমোদন পায়।

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণের এই গবেষণার ফল স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করে শিং মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এই গবেষণা বিলুপ্তপ্রায় এ মাছটিকে সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন

×