অভয়াশ্রমে বাড়ছে দেশি মাছ, জেলেদের স্বস্তি

কুমারখালীর কালীগঙ্গা বাদল বাসা বাঁওড়ে তৈরি অভয়াশ্রম সমকাল
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪ | ২৩:২১
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়ক ঘেঁষে কালীগঙ্গা বাদল বাসা বাঁওড়। সড়ক থেকে প্রায় দুই গজ দূরে বাঁশ ও সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে ঘেরা। এতে বাঁধা লাল নিশান। একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে– ‘মৎস্য অভয়াশ্রম’। বাঁওড়ের উত্তর অংশের সভাপতি মুসা আলী খান বলছিলেন, অভয়াশ্রম করার কারণে দেশি মাছ ধরা পড়ছে জালে। মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা বাদল বাসা বাঁওড়ে দেশি মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে এ অভয়াশ্রম। জলাশয়ে দেখা মিলছে বিলুপ্তপ্রায় টাকি, শোল, পুঁটি, গজারসহ হরেক মাছ। অভয়াশ্রম করায় গত ১০ বছরে বাঁওড়ে দেশি মাছের উৎপাদন অন্তত আড়াই গুণ বেড়েছে বলে দাবি মৎস্য বিভাগের। জেলেদের আয় বেড়েছে অন্তত সাড়ে তিন গুণ। এতে খুশি জেলেরা আরও অভয়াশ্রম করার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে মাছ ধরা, জলাশয় ভরাট, নদী-নালা, খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। শিং, ট্যাংরা, টাকি, শোল, গজার, পুঁটি, কইসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। অনেক মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এতে বাজারে বাড়ছে মাছের দাম। আমিষের উৎসেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। জেলে মো. হানিফ মোল্লার ভাষ্য, আগে জাল টানলেই নানা ধরনের দেশি মাছ পাওয়া যেত। বাজারে এসব মাছের চাহিদা থাকলেও নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে।
মৎস্য বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নে প্রায় ১৬ হেক্টর জায়গাজুড়ে রয়েছে কালীগঙ্গা বাদল বাসা বাঁওড়। সেখানে দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ২০১৩ সালে পাঁচ বিঘা আয়তনের মাছের অভয়াশ্রম করে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কার্যালয়। ফলে ১০ বছর ধরে বাঁওড়ে দেশি মাছের উৎপাদন বাড়ছে।
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, আগে বছরে ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ত। তবে অভয়াশ্রমের ফলে প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে উৎপাদন। অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপকারভোগীদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় সভা করেন মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এলাকায় নিবন্ধিত ৬৫ জন জেলে রয়েছেন। গত অর্থবছরে ৫ থেকে ৬ টন দেশি মাছ পাওয়া গেছে বাঁওড়ে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা গেছে, উপজেলায় পুকুর, দিঘি, খাল-বিল, ধানক্ষেত, বাঁওড়, প্লাবনভূমিসহ প্রায় ১ হাজার ৮৯০ হেক্টর জলাশয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে মাছ ধরা, জলাশয় ভরাট, নদী-নালা, খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে দেশি মাছ ঝুঁকিতে রয়েছে।
কুমারখালী নাগরিক কমিটির সভাপতি মো. আকরাম হোসেন বলেন, ছোটবেলায় খাল-বিলে, নদী ও পুকুরে কই, টাকি, শিং, মলা, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখতাম। অপরিকল্পিতভাবে মাছ ধরা ও খাল-বিলে পানি না থাকায় এসব মাছ বিলুপ্তপ্রায়। এগুলো সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি তাঁর।
অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, অভয়াশ্রমটি তদারক করছে প্রশাসন। দেশি মাছ বাঁচাতে অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
- বিষয় :
- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ