জামদানিতে স্বপ্নের বুনন

নিখুঁত বুননে ব্যস্ত ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার জামদানি কারিগর মোস্তফা সমকাল
মো. ইকবাল হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪ | ০০:০৯
আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পাইনাল গ্রামটি ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে। এ গ্রামের ছেলে মোস্তফা রহমান কাজ করতেন নারায়ণঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার জামদানি পল্লিতে। তবে করোনা মহামারির সময় বেকার হয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন তাঁত শ্রমিক মোস্তফা। এর পর নিজ বাড়িতে একটি তাঁত বসিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে শুরু করেন জামদানি শাড়ি বোনা। চার বছর সেই একটি তাঁতের স্থলে এখন বসেছে ছয়টি। তাঁর কারখানায় কাজ পেয়েছেন গৃহবধূ, বেকার যুবকসহ ১২ জন।
মোস্তফা সমকালকে জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিভিন্ন তাঁতপল্লিতে প্রায় ২০ বছর কাজ করেছেন। ২০২০ সালে করোনার সময় বেকার হয়ে পড়লে নিজ এলাকায় একটি তাঁত বসিয়ে জামদানি শাড়ি বুনতে শুরু করেন। পদ্মা সেতু চালুর পর রূপগঞ্জ থেকে দক্ষ তাঁত শ্রমিক এনে এলাকার বেকারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁতের সংখ্যা বাড়িয়েছেন।
তিনি আরও জানান, কারখানাটি গড়ে তুলতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে ছয়টি তাঁতে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫টি জামদানি শাড়ি বোনা যায়। প্রতিটি শাড়ি প্রকারভেদে ১২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। সুতা, কারিগরদের বেতন, আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে তাঁর প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়। লাভ থাকে মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সরকারি সহযোগিতা পেলে তাঁত বাড়াতে চান বলেও জানান তিনি।
পানাইল গ্রামের গৃহিণী লতা বেগম ৩-৪ মাস ধরে কাজ শিখছেন এখানে। তিনি বলেন, সংসারে কাজ শেষ করে বাড়তি সময়ে মোস্তফা ভাইয়ের তাঁতে সময় দিই। এখন আমি কাজ শিখছি, তাও প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পাই।
পার্শ্ববর্তী চাপুলিয়া গ্রামের হুসাইন আগে রূপগঞ্জে তাঁতপল্লিতে কাজ করতেন। এলাকায় তাঁত চালু হওয়ায় চলে এসেছেন। প্রতি মাসে আয় করছেন ২০ থেকে ২৫
হাজার টাকা। তিনি জানান, বাড়িতে থেকে কাজ করছি; ঘর ভাড়া দিতে হচ্ছে না। পরিবার নিয়ে এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছি।
উদ্যোক্তা মোস্তফার স্ত্রী লিপি সুলতানা জানান, তিনি স্বামীর কাছ থেকে তাঁত
বোনা শিখেছেন। স্বামী কাজের জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গেলে তিনিই পুরো বিষয় দেখভাল করেন।
টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামান জানান, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় জামদানি শাড়ি তৈরি হচ্ছে– এটি খুব আনন্দের। এলাকার কিছু বেকার কাজ পেয়েছেন। এখন অনেকেই যদি মোস্তফার মতো তাঁত গড়ে তোলেন, তাহলে এলাকার অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন ইয়াসমিন বলেন, এ উপজেলায় জামদানি শাড়ি তৈরি হচ্ছে– শুনে খুব ভালো লাগছে। সময় করে একদিন কারখানা দেখতে যাব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তা মোস্তফাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
- বিষয় :
- জামদানি