পটুয়াখালীতে প্রধানমন্ত্রী
ঘূর্ণিঝড়ে যাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, সব করে দেব

রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি-ফোকাস বাংলা
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪ | ০০:৪৯ | আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ | ০৭:২৩
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বাঁধ দ্রুত পুনর্নির্মাণে তাঁর সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, ইতোমধ্যে আমরা খোঁজ নিতে বসেছি। তা ছাড়া আমি আবার সবার সঙ্গে বসব; যেখানে যাদের বাড়িঘর ভেঙেছে, তাদের ঘরবাড়ি করে দেব।
গতকাল বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন আয়োজিত কলাপাড়ায় সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসসের।
আওয়ামী লীগ জনগণ ও দেশের উন্নয়নে সব সময় আন্তরিকভাবে নিবেদিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করব।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক লোকই তো ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তারা এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রকৃতির নিয়মেই আসে। সেখানে মানুষের জীবনমান বাঁচানোই সবচেয়ে বড় কথা। জিনিস গেলে পাওয়া যায়; কিন্তু জীবন তো আর পাওয়া যায় না।
নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ প্রদানে জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আজ দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে।
আমরা রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ নির্মাণ করে আপনাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা সব করে দিয়েছি। এখন ছয়-সাত ঘণ্টার মধ্যেই সড়কপথে ঢাকা থেকে কলাপাড়া আসা যায়।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এবারে খুবই অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ তাদের করে দেওয়া সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় পেয়েছে। দুর্যোগ-সহনীয় ঘরবাড়ি দরিদ্রদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। যে কারণে মানুষ ও পশুপাখি আশ্রয়ের জায়গা পেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। বর্ষার আগেই যাতে এগুলো পুনর্নির্মাণ করে মানুষকে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে বাঁচাতে পারা যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের সঙ্গে বসে হিসাব নিরূপণ করে যেখানে যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, সেগুলোও সংস্কারের পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি। ধান কাটা শেষ হয়ে গেলেও তরিতরকারি ও ক্ষেতের ফসল যা নষ্ট হয়েছে, কৃষকরা যেন নতুন উদ্যমে আবার চাষাবাদ করতে পারেন, সে জন্য বীজ, সার প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এ অঞ্চলে সেনানিবাস ও নৌবাহিনী ঘাঁটি, পায়রা বন্দর প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলেই এই এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এর আগে অনেকে সরকারে থাকলেও কেউ এদিকে দৃষ্টি দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ অঞ্চল অবহেলিত ছিল। এ অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। প্রতিনিয়ত তারা জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে; কিন্তু সেটাকে মোকাবিলা করে মানুষের জীবনমান রক্ষা করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য এবং সেই কাজই তারা করে যাচ্ছেন।
যুবসমাজের মাঝে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণ প্রদান, স্টার্টআপ প্রোগ্রাম, ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বেকারের সংখ্যা এখন মাত্র ৩ ভাগ; সেটাও থাকবে না। তবে নিজেকে উদ্যোক্তা হতে হবে এবং শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে।
কলাপাড়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্মল নন্দীর সভাপতিত্বে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার থেকে পটুয়াখালী জেলার মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র পরিদর্শন করেন। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে হেলিকপ্টারটি যখন ধীরগতিতে অনেক নিচু দিয়ে উড়ছিল, তখন রিমালে আক্রান্ত দুটি এলাকা প্রত্যক্ষ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর গতকাল দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কলাপাড়ার খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। এখানে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজে ঘূর্ণিদুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর তিনি পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কে শহীদ শেখ কামাল সেতু পরিদর্শন করেন এবং পরে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
- বিষয় :
- ঘূর্ণিঝড় রিমাল
- প্রধানমন্ত্রী