সেতু ভেঙে খালে বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস, নিহত বেড়ে ৯

খালে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ছবি: সমকাল
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪ | ১৮:৫১ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ | ১৯:৪৮
বরগুনার আমতলী উপজেলায় বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস সেতু ভেঙে খালে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে নয়জনে দাঁড়িয়েছে। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার হলদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুটিতে চলাচলে আগেই সতর্কতা নোটিশ টাঙানো ছিল।
জানা যায়, এ দুর্ঘটনায় প্রথমে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, পরে উদ্ধার করা হয় আরও দুজনের। নিহত সবাই নারী ও শিশু। তাদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে এবং দুইজনের বাড়ি একই এলাকার গুরুদল গ্রামে।
নিহতরা হলেন- শিবচরের মুনী বেগম (৪০), তার ছোট মেয়ে তাহিয়া (৭), বড় মেয়ে তাসফিয়া (১১), একই এলাকার ফরিদা বেগম (৫৫), রাইতি (৩০), ফাতেমা আক্তার (৪০), রুবী বেগম (৪০), হলদিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের মেয়ে হৃদি (৫) ও তার মা জাকিয়া বেগম (৩০)।
জানা গেছে, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ১৭জন যাত্রী নিয়ে ছেলের বাড়িতে আসার সময় শনিবার এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, এই লোহার সেতুটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএনপি ও জোট সরকারের আমলে নির্মিত হয়েছিল। যেখানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়, সেখানে একসময় বাঁশের সাঁকো ছিল। পরে ওই এলাকার দূর্ভোগ কমানোর জন্য পায়ে হাটার জন্য সেতু নির্মাণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এই সেতুটি মূলত মানুষের পায়ে হাটার জন্য নির্মাণ করা হয়।
প্রায় বিশ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে চলাচলে সতর্কতা নোটিশ টাঙানো ছিল। সেটি উপেক্ষা করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান উপজেলার প্রকৌশলী।
স্থানীয়রা জানায়, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের মনির হাওলাদারের মেয়ে হুমায়রা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। ওই অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে তারা মাইক্রোতে করে আমতলী আসছিল। পথিমধ্যে মাইক্রোটি হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাঝ বরাবর ভেঙে কচুরিপানায় ভরা খালে পরে তলিয়ে যায়। তবে বৃষ্টির কারণে এবং খালে কচুরিপানা থাকায় উদ্ধারকাজে বিলম্ব হয়। পরে মাইক্রোটি পানির ওপরে তোলার পর মরদেহ বের করা হয়।
এ সময় চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- মাহবুব খান, সোহেল খান, সুমা আক্তার ও দীশা আক্তার।
জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, ‘শুক্রবার আমরা ভাগ্নি হুমায়রা বেগমের বাড়ি হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে যাই। সেখান থেকে একটি হাইএস মাইক্রোযোগে আজ শনিবার দুপুর ১টার দিকে ভাগ্নি জামাইয়ের বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওয়ানা করি। দুপুর দেড়টার দিকে হলদিয়া বাজার সংলগ্ন একটি লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাইক্রোটি মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক সেতুটি ভেঙে যায়। এরপর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আল্লায় মোগো বাঁচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।’
আরেকজন জীবিত উদ্ধার মাহবুব খান বলেন, ‘সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। এর চাইতে আমাদেরও মইর্যা যাওয়া ভালো ছিল।’
হলদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোটি খালে পরে যাওয়ার পর আমরা খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধার করি। ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় ৯ জন মারা গেছে।
দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বরগুনার সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বিকেলে আমতলী হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
- বিষয় :
- নিহত
- বরগুনা
- মাইক্রোবাস