পাহাড়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ হুমকির মুখে বন্যপ্রাণী

নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহারে বনের জমিতে অবৈধ বাসাবাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ সমকাল
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪ | ০০:৩৯
শেরপুরের গারো পাহাড়ে পল্লী বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগে হুমকিতে পড়েছে বন ও বন্যপ্রাণী। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে এসব সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এক সময় যেখানে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল, সেখানে দখলবাজরা ঘরবাড়ি নির্মাণের পর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেও বন্যপ্রাণীর জন্য তা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের আবাসস্থল হারিয়ে প্রায়ই বন্যহাতি লোকালয়ে চলে আসছে। ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা। তা ছাড়া এসব বিদ্যুৎ সংযোগে সঞ্চালন লাইনগুলোতে প্লাস্টিকের কভার না থাকায় গাছের ডালের সংস্পর্শে শর্টসার্কিট হয়ে যে কোনো সময় গহিন অরণ্যে দাবানল সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, একটি ভোটার আইডি কার্ড ও ৪ হাজার টাকা দিলেই বনের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীরা।
বন বিভাগ বলছে, অনুমতি না নিয়েই বিদ্যুৎ বিভাগ দখলদারদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। তবে বন বিভাগ চাইলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
বন বিভাগের তথ্যমতে, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে গারো পাহাড়। এই তিন উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমির মধ্যে দখল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই হাজার একর। তিন রেঞ্জের মধ্যে বালিজুড়ি রেঞ্জে ৪৩৭ একর, রাংটিয়া রেঞ্জে ১৩৯৬ একর, মধুটিলা রেঞ্জে ৫৭৭ একর দখল হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এক সময় পাহাড়জুড়ে দেখা যেত বহু টিলা। সে সময় বনের ভেতরে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ছিল। তবে ধীরে ধীরে মানুষ টিলা কেটে ঘরবাড়ি তৈরি, বন ধ্বংস করে চাষাবাদ শুরু করে। এর ফলে কমতে থাকে বনভূমি। এভাবেই কেউ ৩০ বছর, কেউবা ৪০ বছর ধরে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। দখলকারীরা প্রথমে পাহাড়ি টিলা কেটে ও জঙ্গল পরিষ্কার করে ছোট পরিসরে ঘর তোলেন। পরে ধীরে ধীরে অবৈধ বসতির সম্প্রসারণ করতে থাকেন। অর্থের বিনিময়ে বনের ভেতরে অবৈধ ঘরবাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে বসবাস করছেন তারা। বনের ভেতরের অংশ আলোকিত থাকায় বন্যপ্রাণীরা বিভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জীবন। একদিকে বন উজাড়, অন্যদিকে বিদ্যুতের আলো, বন্যপ্রাণীরা দিশেহারা হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। তাদের তাণ্ডবে প্রায়ই মানুষ মারা যাচ্ছে। বনের মধ্যে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বন্যহাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া কোনোভাবেই বনের ভেতরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিদ্যুৎ বিভাগ বন বিভাগের কোনো অনুমতি ছাড়াই সংযোগ দিচ্ছে।’
মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের লাইন নিতে হলে বসবাসকারীদের জমির দলিলসহ অনেক কাগজপত্র দিতে হয়। কিন্তু যারা পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তারা তো জমির কাগজপত্র দিতে পারবেন না, জমি তো সরকারি। কিন্তু কীভাবে বিদ্যুতের সংযোগ পেলেন, সেটা তাদের জানার বাইরে। তবে বনে অবৈধ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শেরপুরের জেনারেল ম্যানেজার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আক্তারুজ্জামানের ভাষ্য, সরকারের নির্দেশনা থাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে এমন কাজ করা হয়েছে।
- বিষয় :
- বিদ্যুৎ সঞ্চালন