বন্যা
দিশেহারা ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাপাড়ের মানুষ

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর। ছবি: সমকাল
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪ | ১৭:৩৪ | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ | ১৯:০৭
কুড়িগ্রামে শনিবার বিকেল থেকে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও পানিবন্দিদের ভোগান্তি কমেনি। বরং তীব্র ভাঙনের ফলে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
আজ রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কিং ছিনাই, জয়কুমার ও নামা জয়কুমার গ্রামের কমপক্ষে ৫০টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে জয়কুমার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ কিং ছিনাই গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার। একই উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালীরহাট ঘাট এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজার নদী ভাঙনে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বসতভিটা হারিয়েছে ৮০টি পরিবার।
রৌমারী ফেরী ঘাট ও উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের চরবন্দবেড়, ফলুয়ারচর, পালেরচর, কুটিরচর, দক্ষিণ ফলুয়ারচর, পশ্চিম ফুলুয়ারচর, খনজনমারা, দক্ষিণ বাগুয়ারচর ও চর শৌলমারী ইউনিয়নের খেদাইমারী, ঘুঘুমারী, সুখেরবাতি, সোনাপুর, চর খেদাইমারী, শেখের বাজারসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছে। গত এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে রৌমারী উপজেলার চর শৈলমারী ও বন্দবেড় ইউনিয়নের ৫০টি বাড়িসহ প্রায় ৩০ একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের খুদিরকুঠি এলাকায় বিলীনের ঝুঁকিতে খুদিরকুঠি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজার, চিলমারী উপজেলায় কাচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।
অন্যদিকে গত ২ দিনের ব্যবধানে ধরলা নদীপাড়ে প্রায় ১৫টি বাড়ি ভেঙে গেছে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমাদের মোল্লারহাট বাজার ও কমিউনিটি ক্লিনিক ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। পাউবোকে জানানো হয়েছে বিষয়টি।’
সদরের চর রসুলপুরের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘বাবা পানি কমলেও ভাঙন তো কমে নাই। আমার ৫টা ঘর, ২টা গরু বানের পানিত ভাসি গেইছে। ৭ ছেলে-পেলে নিয়ে কোথায় যাবো?’
ভুরুঙ্গামারীর নলেয়া গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব মিয়া বলেন, গতকাল রাইতত হামার বাঁধ ভাঙি নদিত তলে গেইছে। হামার এই গ্রামত ৬০-৭০টা বাড়ি আছে, সোগ ভাঙনের মুখে।’
রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কৃষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘৩ একর জমিত বাদামের আবাদ করছি। একর প্রতি খরচ হইছে ২২ হাজার টাকা। আবাদের ৩ ভাগ মাটি এক রাইতোতে তিস্তাত গেইছে। ১২০-১৩০ মণ বাদামের আবাদ আমার ক্ষতি হলো।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘এ মুহূর্তে জেলায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কাজ করছেন। আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যার্তদের উদ্ধারে চারটি স্পিড বোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ২৫১ মেট্রিক টন চাল প্রস্তুত রয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলছে।
- বিষয় :
- কুড়িগ্রাম
- বন্যা
- ব্রহ্মপুত্র নদ
- তিস্তা