ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বেহাল খোকসা রেলস্টেশন জ্বলে না সিগন্যাল বাতি

বেহাল খোকসা রেলস্টেশন জ্বলে না সিগন্যাল বাতি

ফাইল ছবি

মুনসী লিটন, খোকসা (কুষ্টিয়া)

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪ | ২২:৪১

সংকেত ঘরে জ্বলে না বাতি। সিগন্যাল পাখাতেও আর ওঠে না লাল-সবুজ। লাইন ক্লিয়ারের বার্তা আদান-প্রদান করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এমন বেহাল চিত্র পোড়াদহ-রাজবাড়ী রেলপথের মধ্যবর্তী খোকসা স্টেশনের।
‘ক্লোজিং ডাউন’ ঘোষণা করায় এখানে বন্ধ রয়েছে ক্রসিং। ফলে ঢাকাগামী তিন জোড়া আন্তঃনগর ছাড়াও অভ্যন্তরীণ বেশির ভাগ ট্রেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বিশেষ করে রাজশাহীগামী ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’ ও ঢাকাগামী ‘মধুমতি এক্সপ্রেস’ ৪০ মিনিট বিলম্বে চলাচল করছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারো যাত্রী।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের খোকসা স্টেশনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ কিলোমিটার। স্টেশন মাস্টারসহ অনুমোদিত জনবল ১৫। দুই বছর আগে স্টেশন মাস্টার তৌফিক আহম্মেদকে ঈশ্বরদী বাইপাসে প্রেষণে দেওয়া হয়। এর পর একজন বুকিং সহকারীসহ চার কর্মচারী দিয়ে চলছে পুরো কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন খোকসা স্টেশন দিয়ে ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস, নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস, টুঙ্গীপাড়া-রাজশাহীর টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, দুই জোড়া শাটল ছাড়াও অভ্যন্তরীণ রুটের একাধিক ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে এখানে টুঙ্গিপাড়া ও মধুমতি এক্সপ্রেসের নিয়মিত ক্রসিং থাকলেও স্টেশনটি ক্লোজ ডাউন ঘোষণা করায় তা এখন বন্ধ। ফলে ক্রসিং হচ্ছে পাংশা কিংবা কুমারখালী। এ কারণে খোকসা স্টেশনে এসে পরবর্তী গন্তব্যের লাইন ক্লিয়ারের আশায় ট্রেনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
খোকসা স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট বুকিং ও পণ্য পরিবহন থেকে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আসে। বেসরকারি খাতের ট্রেনগুলো থেকে আয় সবচেয়ে বেশি। স্টেশনে প্রয়োজনীয় জনবল থাকলে রাজস্ব আরও বাড়ানো সম্ভব।
সরেজমিন শনিবার দুপুর ১টা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি। রাজবাড়ীগামী ফিরতি শাটল ট্রেন পার হবে। তখনও শতাধিক যাত্রী স্টেশনে। বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা ব্যস্ত টিকিট বিক্রিতে। স্টেশন মাস্টারের কক্ষের দরজা বন্ধ। তবে টেলিফোন বেজে উঠলেই একজন ছুটে যাচ্ছেন, কিছুক্ষণ পর ফিরে আসছেন। কথা বলে জানা গেল, তিনি স্টেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিরাজুল ইসলাম। পাশের স্টেশন থেকে লাইন ক্লিয়ার চেয়ে টেলিফোন বার্তা পাঠালে উত্তর দিতেই তিনি যাচ্ছেন কক্ষটিতে।
লাইন ক্লিয়ার দেওয়া থেকে ঘণ্টা বাজানো– সবই করতে হয় মিরাজকে। বাকিদের মধ্যে বুকিং সহকারী সকাল থেকে ডিউটি করে চলে গেছেন। পয়েন্টম্যান সামলাচ্ছেন প্রধান রেল ক্রসিংয়ের ফটক। পোটারও স্টেশনে ব্যস্ত।

সংগীতশিল্পী খন্দকার সেলিম রেজা জানান, স্টেশনের বেহাল দশায় যাত্রীরা বিরক্ত। অনেকেই ট্রেনে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ খোকসা থেকে ট্রেন ধরে কর্মজীবীরা ঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারেন না। 
স্টেশনসংলগ্ন দোকানে ৩০ বছর পান ও প্রসাধনী বিক্রি করছেন ইসলাম আলী। তিনি জানান, অবিভক্ত বাংলায় খোকসা স্টেশন থেকে ট্রেনে কলকাতায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন হতো বলে তিনি শুনেছেন। এখানে নানা সংকট, যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াত কষ্ট মনে করেন। 
প্রেষণে থাকা স্টেশন মাস্টার তৌফিক আহম্মেদ বলেন, পাংশা ও কুমারখালীতে সার্কিট ব্রেকিং হওয়ায় প্রতিদিন মধুমতি এবং টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেন বিলম্বে ছাড়া হচ্ছে। দ্রুত ক্লোজিং ডাউন থেকে স্টেশনের মুক্তি দরকার। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ছাড়া ভোগান্তি কমবে না।
 

আরও পড়ুন

×