ভয়ংকর চায়না দুয়ারী জালে অস্তিত্ব সংকটে দেশি মাছ

সাদুল্লাপুরে ঘাঘট নদীর তীরে শুকানোর জন্য রাখা চায়না দুয়ারী জাল
সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪ | ২২:৪৩
‘চায়না দুয়ারি’ নামে ভয়ংকর এক জাল ছড়িয়ে পড়েছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের খাল-বিল-নদীতে। হালকা ও মিহি বুননের ছোট ফাঁসের এই জালে ধরা পড়ছে নানা প্রজাতির মাছ, পোনা। কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরতে পারায় কারেন্ট জালের চেয়েও বিপজ্জনক এই জাল জেলেদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে দেশি প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জীবিকার তাগিদেই দরিদ্র মৎস্যজীবী পরিবারগুলো এ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন, জানান রছুলপুর গ্রামের জেলে পরিবারের লিখন মিয়া। তিনি বলেন, সরকার জেলেদের মধ্যে পরিবেশের উপযোগী জাল বিতরণ করলে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো বেঁচে থাকার অবলম্বন পাবেন। এতে মাছের ঘাটতি কমে আসবে।
একই কথা বলেন মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপজেলায় ৫ হাজার ৬১০টি পুকুর আছে। ছোট-বড় সরকারি খাস জলাশয় ২০টি। নিবন্ধিত মৎস্যজীবী দুই হাজার ২৫৮ জন। পোনা মাছ উৎপাদনে ৬টি হ্যাচারি আছে। চায়না দুয়ারীর ব্যবহার বন্ধে এসব জলমহাল প্রকৃত মৎস্যজীবীদের ইজারা দিতে হবে।
সরেজমিন উপজেলার ঘাঘটসহ নদী খাল বিল ঘুরে দেখা গেছে, নতুন পানিতে দেশি মাছগুলো ডিম ছেড়েছে। কিন্তু ডিম ফুটিয়ে রেণু পোনাগুলো বড় হওয়ার আগেই সেগুলো বধে নেমে পড়েছে মৎস্য শিকারিরা। তাদের জালে আটকা পড়ছে গছি, পোয়া, শোল, টাকি, শিং, মাগুর, ভেদা বা মেনি, বেলে বা বালিয়া ও পুঁটিসহ দেশি নানা প্রজাতির মাছ। বাদ পড়ছে না উপকারী প্রাণী ব্যাঙ, সাপ, কাঁকড়া, কুচিয়াসহ নানা জাতের পোকা-মাকড়ও। পানির নিচে বসিয়ে রাখা এই জাল উপর থেকে বোঝার উপায় নেই। তাই মৎস্য শিকারিরাও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে সহজেই এই জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারেন।
দীর্ঘদিন ধরেই সাদুল্লাপুরে পূর্ণাঙ্গ মৎস্য কর্মকর্তা নেই। বিগত ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বদলি হয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তা সেরাজাম মুনিরা সুমি। বর্তমানে এই অফিসে কর্মরত একজন ক্ষেত্র সহকারী আরেকজন অফিস সহায়ক। গত ৩ মার্চ এখানে যোগদান করেন মৎস্য কর্মকর্তা সমিতা খাতুন। তিনি মাত্র চার দিন অফিস করে ৭ মার্চ থেকে আছেন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে। অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা। নিজ উপজেলা সামলিয়ে তিনি সাদুল্লাপুরে তেমন আসেন না বলে জানা গেছে। এসব কারণে গত ৯ মাসে এ উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে কোনো ধরনের অভিযান চালানো হয়নি। সর্বশেষ গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ঘাঘট নদী ও আশপাশের এলাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ মিটার নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী ও ১ হাজার মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
ঘাঘট নদীর তীরবর্তী এলাকার জামির হোসেন সরকার বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা না থাকার সুযোগে নিষিদ্ধ জালের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। খাল-বিল এবং ঘাঘট নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রতি পরিবারেই আছে চায়না দুয়ারী জাল। এই জালে মাছ শিকারের কারণে খাল-বিল ও নদীগুলো মৎস্যশূন্য হচ্ছে। পোনা মাছ বড় না হতে পারায় দেখা দিচ্ছে মাছের অভাব। হাট-বাজারে চাহিদামতো মিলছে না মাছ।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হাবিব বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত সবসময় প্রস্তুত থাকে। মৎস্য বিভাগ চাইলেই নিষিদ্ধ জাল আটকে অভিযানে যাওয়া যাবে।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারজান সরকার বলেন, শিগগিরই নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জালসহ অবৈধ জাল আটকে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
- বিষয় :
- গাইবান্ধা
- সাদুল্যাপুর
- মাছ নিধন