সিলেটে বন্যা শেষের আগেই আবার শুরুর আতঙ্ক

সড়ক তলিয়ে বইছে বন্যার পানি। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে লাউতলা-রসুলগঞ্জ সড়কে বন্ধ যান চলাচল। শনিবার লাউতলা গ্রামের চিত্র। ছবি: তাজউদ্দিন আহমদ
সিলেট ব্যুরো ও ওসমানীনগর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪ | ০০:৩১ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ | ০৯:৫৩
সিলেটে গত বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বিভিন্ন নদনদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যেই আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটে শুক্রবার থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। গতকাল শনিবারও সিলেটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এতেই জেলার বন্যা পরিস্থিতি আবার খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ। এর আগে কিছুদিন বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। তার পরও ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের মানুষ এখনও রয়েছেন দুর্ভোগের মধ্য। বন্যার পানি কমার ধীরগতির কারণে লাখ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি এসব উপজেলায়।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য বলছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। যা সকালে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। সকালের চেয়ে বিকেলে পানি বাড়তে দেখা গেছে কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ, শেওলা এবং লোভা, সারি ও সারিগোয়াইন নদীর পয়েন্টে। এসব পয়েন্টে ২ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল অপরিবর্তিত।
সিলেটের আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সজীব হোসেইন জানান, গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় ৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগের দিন শুক্রবার হয়েছিল ১৪ দশমিক ৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৪১ মিলিমিটার।
এদিকে ওসমানীনগরে বন্যার পানি ধীরগতিতে কমায় দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার প্রায় পৌনে ২ লাখ মানুষ। ৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও সাড়ে তিন সহস্রাধিক মানুষ তাদের গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে বসবাস করছেন। তারা প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন কখন পানি কমবে আর বাড়িতে ফিরবেন। আবার অনেকে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়া কাঁচা ঘরবাড়ি সংস্কার নিয়ে। কাজকর্ম না থাকায় নিম্ন আয়ের লোকজন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তবে অপর্যাপ্ত বরাদ্দের কারণে এখনও অনেকেই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত। অপর্যাপ্ত ত্রাণ বরদ্দের কারণে বিপাকে আছেন জনপ্রতিনিধিরাও। সাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহেদ আহমদ মুছা, উমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া, পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সুমন, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজনু মিয়া এবং তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অরুণোদয় পাল ত্রাণ বরাদ্দ অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করেছেন। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সুহেল রানা জানান, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ওসমানীনগরে বরাদ্দ আসা ১০৪ টন চাল ও ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, এবার বন্যায় ওসমানীনগরে ৯৬ হেক্টর বীজতলা, ৭১৬ হেক্টর জমির আমন ধান এবং ২৩৫ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির আনুমানিক আর্থিক মূল্য ১৬ কোটি টাকার বেশি। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সায়মা নাজনীন। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ৪০০ পুকুর ও ১৬ হেক্টর ঘেরের ২০ টন মাছ এবং ১২ লাখ পোনা ভেসে গেছে। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়া আরও প্রায় ১৫ লাখ টাকার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলায় ৩৯ কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক ব্রিজ-কালভার্ট। এগুলো মেরামত করতে অন্তত ৫৫ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে মনে করছেন উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। পাকা সড়কের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও ধারণা তাঁর।
আগামী ৩ জুলাই ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এখনও পানি রয়েছে। এ ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ের অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কীভাবে মূল্যায়ন পরীক্ষা হবে, তা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, যেহেতু সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি শেষ হয়নি, তাই স্থানীয় প্রশাসন বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রমের মধ্যেই আছে। যদি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়, তাহলে সেই কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ঘটবে। বন্যার্তদের জন্য নতুন ত্রাণ বরাদ্দ এসেছে এবং দ্রুত এগুলো দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ততের পুনর্বাসনের জন্যও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যার জন্য এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে এবং ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
- বিষয় :
- বন্যা
- সিলেট
- সিলেটে বন্যা
- বন্যার পানি