বাঘসহ সুন্দরবনের প্রাণীদের রোগ নির্ণয়ে চলছে গবেষণা

সুন্দরবন। ছবি: সংগৃহীত
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪ | ২২:৪৪
পরিবর্তিত প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে বাঘসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণী কোনো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা তা নির্ণয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে চলছে গবেষণা। বিশেষ করে বাঘ এবং এর খাবার হরিণ, বানর, শূকর ও শজারুর বংশ বৃদ্ধি এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এই গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের মাঝামাঝি।
বন বিভাগ সূত্রে জানায়, সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘসহ ৫টি বন্যপ্রাণীর রোগ নির্ণয়ে পাঁচ সদস্যের একটি গবেষক দল বর্তমানে বনে কাজ করছে। গত ৪ থেকে ২৮ মার্চ বনের চারটি রেঞ্জের ৬৫টি গবেষণা প্লট থেকে তারা নমুনা হিসেবে এসব প্রাণীর মল, পশম, হাড়, মৃত প্রাণীর রক্ত প্রভৃতি সংগ্রহ করেন। গবেষণা প্লট থেকে মোট ২৫০টির মতো নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এখন সিলেট, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি ল্যাবে এ নমুনাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
গবেষক দলের প্রধান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সুলতান আহমেদ জানান, এসব প্রাণী কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিনা এবং সংক্রামক রোগ আছে কিনা, গবেষণায় সে তথ্য পাওয়া যাবে। রোগাক্রান্ত থাকলে প্রাণীগুলোকে রোগমুক্ত রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি বাঘের জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়েও হবে গবেষণা। সুন্দরবনে মাঝেমাঝে কিছু বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায় না। গবেষণায় প্রাণীগুলো কী কী রোগে আক্রান্ত তা নির্ণয়ের পাশাপাশি রোগের কারণও খুঁজে বের করা হবে।
বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে সুন্দরবনের মধ্যের নদীগুলো উত্তাল রয়েছে। সে কারণে এখন মাঠ পর্যায়ের নমুনা সংগ্রহের কাজ আপাতত বন্ধ। তবে গবেষণাগারে পরীক্ষার কাজ চলমান। আগামী নভেম্বরে আরও বড় পরিসরে ১৫ দিন নমুনা সংগ্রহ করা হবে। বাঘের মল, পশম, মৃতদেহের রক্তে কোনো জীবাণু আছে কিনা তা তিনটি ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। গবেষণাটি বাঘের ভবিষ্যৎ বংশবৃদ্ধি এবং টিকে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের কাছাকাছি লোকালয়ের কুকুর ও বিড়ালের রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করা হবে। বাঘসহ সুন্দরবনের প্রাণীরা যে ধরনের জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছে, তাতে লোকালয়ের প্রাণীরাও আক্রান্ত হচ্ছে কিনা, গবেষকরা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন।
খুলনার সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, দেশের ইতিহাসে বন্যপ্রাণীর রোগ নির্ণয়ের গবেষণা এটাই প্রথম। এটা আরও আগে সুন্দরবনে শুরু করা উচিত ছিল। তারপরও দেরিতে হলেও শুরু করার বিষয়টি ইতিবাচক। এই গবেষণা বন্যপ্রাণী টিকে থাকা ও বংশবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।