ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বৃক্ষমেলায় ৩৯টি দোকানের মধ্যে একটি বৃক্ষের দোকান

বৃক্ষমেলায় ৩৯টি দোকানের মধ্যে একটি বৃক্ষের দোকান

শরীয়তপুরের বৃক্ষমেলার প্রধান ফটক, ছবি: সমকাল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ১১:১৬ | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ১২:১৭

মূল ফটকের ব্যানারে বড় করে লেখা রয়েছে বৃক্ষমেলা-২০২৪। অথচ মেলায় বসা ৩৯টি দোকানের মধ্যে একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান। একদিকে বন বিভাগ বলছেন মেলার আয়োজন তারা করেননি। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে মেলাটি বনবিভাগের, তারা শুধু সার্বিক সহযোগিতা করছেন। তবে বৃক্ষমেলার নামে এমন আয়োজন মানতে নারাজ অনেকেই।

স্থানীয়রা জানায়, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ প্রাঙ্গণে ১৫ দিনের মেলার আয়োজন করা হয়। যা ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১৫ জুলাই শেষ হওয়ায় কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে মেলায় বসা ৩৯টি দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, ফুচকা-চটপটি, কসমেটিকস, প্রসাধনীসহ শিশুদের খেলনা ও রাইড। মেলার এক কোনে পড়ে রয়েছে মান্নান নার্সারী নামের কেবল একটি গাছের চারা বিক্রির দোকান। 

এদিকে মেলায় বসা দোকানিদের কোনো প্রকার ভাড়া নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে দোকানিদের অনেকেই বলছেন প্রতিদিন ১ হাজার বা তার চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে হবে আয়োজক কমিটিকে।

মেলায় ঘুরে দেখা যায়, মেলার মাঠের প্রধান অংশসহ পুরো জায়গা জুড়ে ফুচকা, চটপটি, আঁচার, কসমেটিকস, প্রসাধনী, দা-বটির দোকান। মেলায় আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীরা সেসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন এবং কেনাকাটা করছেন। তবে চারা বিক্রির দোকানটিতে তেমন কোনো ভিড় ছিলো না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার টাকার গাছের চারা বিক্রি না হলেও অন্যসব দোকানে মালিকদের গড় বিক্রি ছিলো ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি বলেন, বৃষ্টির কারণে আমাদের বিক্রি কম। মেলায় আয়োজক কমিটিকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। বিক্রি না হলে, ভাড়া দিয়ে আমাদের তেমন লাভ হবে না। 

শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলার একপাশে রয়েছে ভূতের বাড়ি। দোকানটির কর্মচারী ফজল বলেন, একটি টিকিট আমরা ৪০ টাকায় বিক্রি করি। এখানে শিশুদের বিনোদন দেওয়া হয়। প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়। তবে ভাড়ার বিষয়টি আমি কিছু জানিনা। এটা মালিক পক্ষ ভালো জানেন।

মেলায় বসা একমাত্র নার্সারিটির মালিক মো. মান্নান হাওলাদার বলেন, আমার মূল নার্সারী মাদারীপুরে। তবে একটি বাগান শরীয়তপুরের পশ্চিম কোটাপাড়া এলাকায়ও রয়েছে। বৃক্ষমেলায় একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান, বিষয়টি তেমন ভালো দেখায় না। অন্য নার্সারি মালিকদের আসতে বলা হলেও, তারা আসেনি।

মেলায় ঘুরতে আসা মনির হোসাইন নামের এক ব্যক্তি বলেন, বৃক্ষমেলার কথার শুনে ভেবেছিলাম এখানে অনেক গাছের দোকান বসবে। কিন্তু একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান বসায় তেমন গাছ নেই। এই মেলা দেখে মনে হচ্ছে, এটি কোনো বাণিজ্য মেলা।

গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ঢালী বলেন, সেদিন দেখলাম ইউএনও মহোদয় মেলার জন্য মাঠে দোকান নির্মাণ করছেন। কিন্তু আমি জানতাম না, এখানে কিসের মেলা হবে। বৃক্ষমেলায় সাধারণত গাছের চারা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু মেলায় মাত্র একটি নার্সারীর দোকান থাকবে, এ কেমন বৃক্ষমেলা! বিষয়টি গোসাইরহাট উপজেলাবাসীর জন্য লজ্জাসহ দুঃখজনক। এটা কখনোই বৃক্ষমেলা হতে পারে না।

মেলার আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে গোসাইরহাটে কোনো বৃক্ষ মেলায় আয়োজন করা হয়নি। শুনেছি নার্সারি মালিক সমিতি, উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় আয়োজন করেছে। তাছাড়া মেলা আয়োজন করার মতো আমাদের এখন কোনো বাজেট নেই।

তবে উপজেলা প্রশাসন দাবি করেছে মেলাটির আয়োজন করেছে বন বিভাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, মেলাটি বন বিভাগ আয়োজন করেছে, তা মূল ফটকে লেখা রয়েছে। মেলাটিকে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। আর ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সরকারি মাঠে মেলা করতে আবার কীসের ভাড়া?

আরও পড়ুন

×