পৌরসভায় চাকরির জন্য বয়স জালিয়াতির তথ্য
নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করছেন মেয়রের অটোরিকশাচালক

.
বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ১৬:১৪ | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ১৬:২৫
বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভায় দুটি পদে চাকরির জন্য দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্ডে জালিয়াতি করে বয়স কমানোর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের একজন পাম্পচালক শ্যামল শীল, অন্যজন নৈশপ্রহরী মো. তাজুল ইসলাম। তাদের মধ্যে শ্যামলের বিরুদ্ধে এক দফায় ও তাজুলের বিরুদ্ধে দুই দফায় জন্মতারিখ সংশোধনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালে চাকরিতে যোগদানের সময় বয়স বেশি হওয়ায় তারা এমন জালিয়াতির আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ। একই নিয়োগে পাইপলাইন মেকানিক পদে অমর শীলের নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভার মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীল তাঁর ভাতিজা অমরকে নিয়োগ দিয়েছেন।
পাম্পচালক শ্যামল শীল বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের মাছরং গ্রামের কালাচাঁদ শীলের ছেলে। তাঁর নামেও দুটি এনআইডি কার্ড পাওয়া গেছে। তাঁর প্রথম কার্ডে (এনআইডি নম্বর ১৯২০৫৭৫৪৪৪) জন্মতারিখ ১৯৮৭ সালের ২ মে। দ্বিতীয় এনআইডিতে (নম্বর ১৯৮৭০৬১১০১০৭৮৫৩৬৪ ও স্মার্টকার্ড নম্বর ১৯২০৫৭৫৪৪৪) তিনি জন্মতারিখ দেখিয়েছেন ১৯৯২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। দুটি এনআইডিতে বাবা ও মায়ের নাম অভিন্ন থাকলেও ঠিকানা ভিন্ন। প্রথমটিতে শ্যামলের ঠিকানা বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের মাছরং গ্রাম ও দ্বিতীয়টিতে বানারীপাড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার বাড়ি রোড দেখানো হয়েছে।
নৈশপ্রহরী তাজুল ইসলাম বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকাঠি গ্রামের মৃত আছমত আলী ব্যাপারীর ছেলে। নাম, ঠিকানা ও বাবা-মায়ের নাম এক থাকলেও ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্ড অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ বদলেছে তিন দফায়। জানা গেছে, ভোটার তালিকা অনুযায়ী মো. তাজুল ইসলামের প্রথম জন্মতারিখ ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি (তালিকার সিরিয়াল নম্বর ০৬০৯৩২৭৮৩২৩৮ ও ভোটারের ক্রমিক নম্বর ১৩১)। দ্বিতীয় ভোটার তালিকায় তাঁর জন্মতারিখ ১৯৯০ সালের ১ ডিসেম্বর (তালিকার সিরিয়াল নম্বর ০৬০৯৩২০০০৪৩৭ ও ভোটার ক্রমিক নম্বর ৬১৭)। তৃতীয়বার সংশোধন করে তাজুল ইসলাম তাঁর জন্মতারিখ দেখিয়েছেন ১৯৯২ সালের ১ ডিসেম্বর (এনআইডি নম্বর ৬৪৬৪৯৬০৯৪৪)।
এসব তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শ্যামল শীলের বর্তমান বয়স ৩৭ বছর ২ মাস ৫ দিন। চাকরি নেওয়ার সময় (২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর) প্রকৃত বয়স ছিল ৩৬ বছর ৬ মাস ২৪ দিন। কিন্তু ৩০ বছর ২ মাস ২৫ দিন দেখিয়ে চাকরি নেন তিনি। এ ছাড়া তাজুল ইসলামের বর্তমান বয়স ৪৯ বছর চার মাস ৮ দিন। চাকরিতে যোগদানের সময় তাঁর বয়স ৪৮ বছর ৯ মাস ১৫ দিন হলেও দেখানো হয় ৩০ বছর ১১ মাস ২৫ দিন। যদিও ওই নিয়োগে বয়সসীমা নির্ধারিত ছিল ১৮-৩০ বছর।
জানা গেছে, তাজুল ইসলাম বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীলের ব্যক্তিগত সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। মেয়রের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুযোগে তিনি ওই পেশার পাশাপাশি নৈশপ্রহরী পদে বহাল তবিয়তে কর্মরত।
এ বিষয়ে জানতে শ্যামল ও তাজুলের মোবাইল ফোন নম্বরে দফায় দফায় কল দিলেও ধরেননি তারা। পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব শাহীন আকতারের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পদে থাকা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে বিষয়টি আইনগতভাবে বিশ্লেষণ করবেন। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।