ডুমুরিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান রবি হত্যা
নির্বাচনে জিততেই তিনবারের চেয়ারম্যানকে হত্যা, ধারণা স্বজনদের

চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি। ছবি-সংগৃহীত
খুলনা ব্যুরো ও ডুমুরিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ২০:০৭ | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ২০:০৯
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম রবিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করতেও পারেনি পুলিশ। আগামী ইউপি নির্বাচনে রবি যাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে না পারে, সেজন্য তাঁকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্বজনরা। এ ছাড়া ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্বের কারণেও হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এসব বিষয় সামনে রেখে হত্যার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রোববার দুপুরে নিহত রবির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। লাশ নিতে আসা নিহতের ভাগ্নে সাইফুর রহমান রাজু ও মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিহত রবি ২০১১, ২০১৬ ও ২০২১ সালে শরাফপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শেষ ২ বার নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। তিনি এলাকায় অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শরাফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক এএইচএম ওবায়দুল্লাহ ও বিএনপির বিএম আলমগীর কবীরসহ কয়েকজন তাঁর কাছে পরাজিত হন। তিনি বেঁচে থাকলে অন্য কেউ সহজে চেয়ারম্যান হতে পারবেন না, সে কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
মর্গের সামনে ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, নিহত রবি সদালাপী ও খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ৩ বার নির্বাচনে তাঁকে কেউ হারাতে পারেনি। ইউপি নির্বাচনের প্রতিপক্ষরা তাঁকে হত্যা করতে পারে।
রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডুমুরিয়ার শরাফপুর ও বানিয়াখালি বাজারের দুই শতাধিক দোকানপাট বন্ধ। এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। এ ছাড়া শরাফপুরের মাওলানা ভাসানী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ ও বানিয়াখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হয়নি। নিহত রবি এ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। বেলা ১২টার দিকে রবির খুনীদের শাস্তির দাবিতে স্থানীয় লোকজন বানিয়াখালি বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
খুলনার পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমান বলেন, নিহত রবির সঙ্গে ইউপি নির্বাচন, ব্যবসা ও ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডুমুরিয়া থানা পুলিশ, ডিবি, র্যাব, সিআইডি ও পিবিআই সবাই আলাদাভাবে ঘটনার তদন্ত করছেন।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর নিরালা এলাকায় রবির বাসায়। সেখানে নিহতের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে মরদেহ ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে দলের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
আসরের নামাজের পর মাওলানা ভাসানী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহত রবি ডুমুরিয়ার বৃত্তি ভুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত হাবিবার রহমান শেখের ছেলে। তাঁর স্ত্রী শায়লা ইরিন খুলনায় আঞ্চলিক সমাজসেবা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রভাষক। তাদের বড় ছেলে তালহা জুবায়ের নগরীর নিরালা এলাকার এসওএস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র এবং ছোট ছেলে ত্বকীর বয়স ২ বছর।
প্রসঙ্গত, ইউপি চেয়ারম্যান রবি শনিবার রাতে ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী সভা শেষে মোটরসাইকেলে নগরীর নিরালা এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। পথে রাত ১০টার দিকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়া এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ রবিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
- বিষয় :
- ডুমুরিয়া
- চেয়ারম্যান
- খুলনা