অবৈধ সম্পদ অর্জন
পিয়নের ৩ স্ত্রী কারাগারে, কোটি টাকা অর্থদণ্ড

ফাইল ছবি
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ০২:২০
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক মামলায় তিতাস গ্যাসের পিয়ন (অফিস সহায়ক) জহিরুল ইসলামের ৩ স্ত্রীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রোববার এই সাজা দেন কুমিল্লার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বেগম শামসুন্নাহার। তবে মামলার দায় থেকে খালাস পান পিয়ন। রায় ঘোষণার সময় তিন স্ত্রীকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
জানা গেছে, পিয়ন জহিরুল ইসলাম ও তাঁর তিন স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দুদক কুমিল্লা কার্যালয় থেকে ৩টি মামলা করা হয়। মামলার রায়ে পিয়নের স্ত্রী সেলিনা আক্তারকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১২ লাখ ১২ হাজার ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড, দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা আক্তারকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৪ লাখ ৩ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং তৃতীয় স্ত্রী আসমা আক্তারকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৩১ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তবে খালাস পেয়ে যান পিয়ন জহিরুল।
দুদক কুমিল্লা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক ফজলুল হক জানান, ৩টি মামলায় স্ত্রীদের সঙ্গে জহিরুল ইসলামকেও আসামি করা হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী জহিরুল ইসলামের ৩ স্ত্রীর অর্থদণ্ডের মোট ৯৮ লাখ ১৫ হাজার ১৩১ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার রায় দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জহিরুলকে তিনটি মামলা থেকেই খালাস দেওয়া হয়। তার স্ত্রীদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কে এই পিয়ন জহির
পিয়ন জহিরুল ইসলাম জহির কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের আবদুল গফুর সর্দারের ছেলে। তার চাকরি শুরু হয় তিতাসে মাস্টার রোলে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ৩৩৬ পিস ৪ ইঞ্চি পাইপ চুরির দায়ে জহিরকে শাস্তি দেওয়া হয়। পরে তিনি রূপগঞ্জে তিতাসের আঞ্চলিক অফিসে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে ৫ বছর কাজ করেন। সেখানে থেকেই ‘জহির বীথি এন্টারপ্রাইজ’সহ তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা স্ত্রী ও ভাগিনার নামে। পরে জহির রূপগঞ্জ তিতাসের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন থেকেই শুরু তার অবৈধ গ্যাসসংযোগ-বাণিজ্য, মিটার টেম্পারিং এবং নানা অপকর্ম। ‘ডেইলি বেসিসে’ থাকার সময়ই ফাইল চুরিসহ নানা অভিযোগে রূপগঞ্জ তিতাস অফিস থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রধান কার্যালয়ে তিতাস গ্যাস ভান্ডার বিভাগের পিয়ন হিসেবে চাকরি নেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত। অবৈধ গ্যাস সংযোগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি নিজের ও তিন স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েন।
অভিযোগ রয়েছে, জহির অবৈধ গ্যাস সিন্ডিকেটের হোতা ছিলেন। তিতাস কর্তৃপক্ষ কোনো এলাকায় গিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এলে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জহির ওই জায়গায় অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিতেন। তার গ্রামের বাড়ি বুড়িচং, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কয়েকশ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, দামি গাড়ি ও বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। তবে স্ত্রীদের সাজা হলেও দুদকের তিন মামলায় তার অব্যাহতি পাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় জহিরের বক্তব্য জানা যায়নি।
- বিষয় :
- অবৈধ সম্পদ অর্জন
- কর্মচারী
- কারাগার