প্রকাশ্যেই নামছে চোরাই কয়লা

সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটের শহীদ সিরাজ লেকের পাশে কয়লা নিয়ে আসা শ্রমিকদের একাংশ সমকাল
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪ | ০০:০৮
কোনো রাখঢাক নেই। নেই লোকে দেখার ভয়। আঁধার রাতের অপেক্ষায় না থেকে দিনেদুপুরে প্রকাশ্যেই নামানো হচ্ছে চোরাই কয়লা। মজুত করা হচ্ছে স্থানীয় ডিপোতে। এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায়।
সম্প্রতি চোরাই কয়লা নামার তথ্য অনুসন্ধানে জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দিনের বেলায় সীমান্তের বিভিন্ন অংশ দিয়ে ভারত থেকে চোরাই কয়লা আনছেন শ্রমিকরা। শনিবার সীমান্তের টেকেরঘাটের শহীদ সিরাজ লেকের (নিলাদ্রী লেক) পাশের একটি ডিপোতে অর্ধশতাধিক শ্রমিককে ভারতীয় সীমানার উঁচু পাহাড় থেকে কয়লা এনে মজুত করতে দেখা গেছে। এ সময় মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে গেলে দা হাতে তেড়ে আসেন শ্রমিকরা। তাদের কয়েকজন বলে ওঠেন, ‘মোবাইল নামাও, পেটে লাথ দিতে আইছ।’ এমন পরিস্থিতিতে মজুতকৃত কয়লার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ এবং শ্রমিকদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সংবাদ সংগ্রহকালেই ভারতের উঁচু পাহাড়ি এলাকা থেকে কয়লা নিয়ে নামতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, চোরাই কয়লা নামছে বহুদিন ধরেই। আগে রাতে লুকিয়ে নামিয়ে ঘরবাড়িতে রেখে গোপনে বিক্রি করা হতো। তবে এখন প্রকাশ্যেই এসব কয়লা আনা হচ্ছে। খোলামেলা রাখা হচ্ছে ডিপোতে। সেখান থেকেই চলছে বেচাকেনা।
মাথায় কয়লার বস্তা, হাতে দা নিয়ে কেন এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে একজন শ্রমিক বলেন, পাহাড়ের ছোট ছোট গাছপালা কেটে এগোতে এই দা প্রয়োজন হয়। এ সময় অর্ধশত শ্রমিকের একটি দল পাহাড় থেকে নেমে শহীদ সিরাজ লেকের সামনের একটি ডিপোতে প্রবেশ করেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বস্তার কয়লা খালি করে আবারও পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হন তারা।
এই এলাকার শ্রমিক বদরুল জানান, প্রতি বস্তা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হিসাবে ডিপোতে বিক্রি করেন তারা। প্রতিদিন দুই থেকে তিন বস্তা কয়লা চোরাই পথে আনা যায়।
জানা যায়, কয়লা চোরাকারবারিরা তুলনামূলক কম ব্যবহার হয়, প্রভাবশালীদের এমন ডিপো ভাড়া নেয়। সীমান্ত এলাকায় নিজেদের প্রশাসনের ‘সোর্স’ দাবি করা স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় অবৈধ পথে কয়লা এনে মজুত করে ডিপোতে। এসব ডিপো থেকে নিয়মিত এলসির কয়লা আমদানি ও রপ্তানি হয়। এর আড়ালে চলে চোরাই কয়লা বিক্রি, যাতে করে সেটি কারও নজরে আসে না।
শুল্ক স্টেশন থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে এসব কয়লা আসায় টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে এর আগেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরও সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে জানার জন্য সোমবার সন্ধ্যায় বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁর সাড়া মেলেনি।
সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম মাহমুদ হাসান জানান, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে কয়লা আনার সুযোগ নেই। যারা চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
- বিষয় :
- কয়লা লোপাট