ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বর্ষায় ডুবছে চরাঞ্চল, ব্যস্ততা বাড়ছে নৌকার কারিগরদের

বর্ষায় ডুবছে চরাঞ্চল, ব্যস্ততা বাড়ছে নৌকার কারিগরদের

বেড়ার সিঅ্যান্ডবি বাজারে নৌকা তৈরির কাজ করছেন কারিগর সমকাল

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪ | ২৩:৫২

বর্ষায় দেশের নদ-নদী, খাল-বিলের পানি বাড়ছে। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়ার নৌকা তৈরির কারিগররা। ভারী বর্ষণে পদ্মা, যমুনা ও হুরাসাগর নদী এবং বিলগুলোয় বাড়ছে পানি। অনেক স্থানে চলছে ভাঙন। ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে ধান, বাদাম ক্ষেতসহ কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। ফলে এলাকার মানুষ নতুন নৌকা তৈরি ও পুরোনোগুলো মেরামত করা শুরু করেছেন। এতে কারিগরদের কদরও বেড়ে গেছে।
বেড়ার আমিনপুর বাজার বাসস্ট্যান্ডে আশরাফুল ইসলামের নৌকা তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, তাঁর পাঁচটি কারখানায় অন্তত ২০ জন কারিগর কাজ করছেন। তিনি জানান, কম দামের নৌকা তৈরিতে জলকড়ই, ডেম্বুল, কদমের মতো কাঠ ব্যবহার করা হয়। এগুলোর দাম পড়ে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৬-৭ হাজার টাকা। প্লেনশিটের নৌকা ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
আমিনপুর বাজারে নৌকা কিনতে এসেছিলেন চরনাগদাহচরের বাসিন্দা শেখ আলী। তিনি বলছিলেন, দু’সপ্তাহ আগে নৌকা কেনার দরকার ছিল। এখন আর না কিনে পারা যাচ্ছে না। গরুর ঘাস কাটা, মাছ ধরা ও পারাপারের জন্য নৌকা কিনতে এসেছেন তিনি। বেড়া সিঅ্যান্ডবি বাসস্ট্যান্ডে নৌকা কিনতে আসা পেচাকোলা গ্রামের মনির খানের ভাষ্য, গত বছরের নৌকাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এবার কিনতে এসে দেখেন, দাম বেশি।

ছয়টি নদী ও অর্ধশতাধিক বিলবেষ্টিত বেড়ায় রয়েছে অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল। এর মধ্যে প্রায় ২২টি চরে রয়েছে মানুষের বসবাস। কয়েক হাজার পরিবার আছে চরাঞ্চলে। শুকনো মৌসুমে যোগাযোগের জন্য হাঁটার পথ থাকলেও বর্ষায় থাকে না। জীবন ও জীবিকার জন্য নৌকা তাদের নিত্যদিনের অপরিহার্য বাহন। চরাঞ্চল দেখে মনে হয়, প্রতিটি গ্রাম ও বাড়ি যেন একেকটি আলাদা দ্বীপ। তাই বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এ বাহন থাকে।
বর্ষায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ থাকে। তবে জীবন-জীবিকা ও অসুখ-বিসুখে জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে যাওয়াসহ প্রায় সব কাজে প্রয়োজন হয় নৌকার। মাছ ধরা তো আছেই। তাই এ মৌসুমে নতুন নৌকা কেনা ও পুরোনোগুলো মেরামতের ধুম পড়ে যায়। বেড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেই নৌকার ব্যবহার হয়। এর মধ্যে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন, কৈটোলা, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, নগরবাড়ী, রূপপুর, ঢালারচরে ব্যবহার হয় বেশি। একই অবস্থা সাঁথিয়ার অনেক এলাকার।

সাঁথিয়ার চতুর হাটে মরিচ বিক্রি করতে এসেছিলেন পাটগাড়ি গ্রামের আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, ‘একটা নতুন নৌকা কেনার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু এ বছর দাম অনেক বেশি হওয়ায় গতবারেরটা দিয়েই চালিয়ে নিতে হবে। আমাদের এখন নৌকাই একমাত্র ভরসা। নৌকা না থাকলে মাছ শিকার করতে পারব না।’
উপজেলার হাড়িয়া ক্যানালপাড়া এলাকার আকমাল হোসেনের ভাষ্য, বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করে সংসার চালাতে হয়। গতবারের নৌকাটি মেরামত করতে কারিগরের সিরিয়াল পাওয়াই কঠিন। গত বছর কারিগরকে ৯০০ টাকা দিন হাজিরায় নিয়েছিলেন। এ বছর ১ হাজার ২০০ টাকার কমে যাচ্ছে না।
সরেজমিনে কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে চরগুলোর বেশির ভাগ ডুবে গেছে। নাকালিয়া বাজারসংলগ্ন যমুনা নদীর পাড়ে পুরোনো নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তারা জানান, উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০টি কারখানায় নৌকা তৈরি হয়। যেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী সেগুলোর কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে চৌকি। নৌকার কাঠের তৈরি চৌকি টেকসই হওয়ায় এর চাহিদা ও দাম বেশি। 
নৌকা তৈরির কারিগর ফজলাল মিস্ত্রি বলেন, বর্ষা আসার আগেই নৌকা ঠিকঠাক করে আলকাতরা দেওয়া হয়। ভাঙাচোরা নৌকার কাঠ দিয়ে চৌকি বানিয়ে বিক্রি করি। চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায় চৌকি পাওয়া যায়। এ চৌকি ৪০ থেকে ৫০ বছরেও ঘুনে ধরে না। নষ্টও হয় না।

আরও পড়ুন

×