ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ক্রেতাশূন্য দুটি স্থলবন্দর বিপাকে কয়লা ব্যবসায়ী

ক্রেতাশূন্য দুটি স্থলবন্দর বিপাকে কয়লা ব্যবসায়ী

হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া স্থলবন্দের পড়ে আছে কয়লার স্তূপ, নেই ক্রেতা সমকাল

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪ | ০০:৫৯

স্থবির হয়ে পড়েছে হালুয়াঘাট উপজেলার কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দর। প্রায় এক বছর ধরে ভারত থেকে কয়লা আমদানি করছেন না ব্যবসায়ীরা। 
এর কারণ ভারত থেকে আমদানি করা কয়লার দাম বেশি। সেই তুলনায় ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার দাম কম। ভারত থেকে আমদানি করা কয়লায় টনপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ক্রেতা না থাকায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টন মজুত কয়লা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দর কর্তৃপক্ষ ও একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দরকে ২০২৩ সালের ১১ মার্চ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দর দুটি দিয়ে ভারত থেকে ৬৯ হাজার ৬০০ টন কয়লা আমদানি করা হয়। এ সময় টনপ্রতি কয়লার দাম পড়ে ২১ থেকে ২২ হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই বন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি করা হয়েছে মাত্র ৯৬৪ টন। বর্তমানে কম দামে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা।

ভারতের তুলনায় ইন্দোনেশিয়ার কয়লার দাম কম। বর্তমান বাজারে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা এক টন কয়লার দাম ১৬ হাজার টাকা। ভারত থেকে আসা এক টন কয়লার দাম পড়ে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। ভারতের কয়লার দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ নেই। ফলে ভারত থেকে বেশি দামে কয়লা আমদানি করে এবং ক্রেতা না থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন দুই বন্দরের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ভারত থেকে কয়লা আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে দুই বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দুটি বন্দরের কাজ না থাকায় প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি দুটি স্থলবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া বন্দরের ভারতের সড়কের ফটক বন্ধ রয়েছে। দুটি বন্দরে সুনসান নীরবতা। গোবরাকুড়া বন্দরের প্রবেশপথ ধরে এগিয়ে গেলে দেখা যায়, দুই পাশে কিছু কিছু খলায় কয়লা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্রেতার দেখা নেই। কোনো কর্মযজ্ঞও নেই। তবে দু-একটি চা দোকান খোলা রয়েছে। সেখানে একজন ব্যবসায়ী ও একজন শ্রমিক নেতার সঙ্গে কথা হয়।

গোবরাকুড়া স্থলবন্দর শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি নূরউদ্দিন বলেন, ‘মূলত দুই বন্দর দিয়া শুধু কয়লা আমদানি করা হয়। দুই বন্দরে শ্রমিক রয়েছেন ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার। এক বছর ধরে বন্দরে কোনো কাজ নেই। পরিবার লইয়া দুই বেলা খাওনের জোগাড় করতে প্রায় সবাই দিনমজুরি করেই চলতাছে।’
কথা হয় গোবরাকুড়া মেসার্স সুমী-মুন্নি এন্টারপ্রাইজের মালিক মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে আমরা ভারত থেকে কয়লা এনেছি। টনপ্রতি খরচ পড়েছে ২১ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। এখন ক্রেতারা দাম বলে টনপ্রতি ১৬ হাজার টাকা। কারণ ইন্দোনেশিয়ার কয়লা ক্রেতারা ১৬ হাজার ৫০০ টাকা টনপ্রতি কিনতে পাচ্ছেন। এখন টনে তো ৪-৫ হাজার টাকা লোকসানে দিতে পারছি না। তাই নতুন করে কোনো ব্যবসায়ী ভারত থেকে কয়লা আমদানি করছেন না।’ তিনি বলেন, ‘দুই বন্দরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টন কয়লা অবিক্রীত অবস্থায় এক বছর ধরে পড়ে আছে। এই কয়লায় সবাই টাকা বিনিয়োগ করে লোকসানে পড়েছেন।’

কড়ইতলী-গোবরাকুড়া আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের মহাসচিব অশোক সরকার জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে কম দামে দেশে কয়লা আমদানি হয়। তার তুলনায় ভারত থেকে কয়লা আমদানি করতে বেশি টাকা লাগে। যে কারণে এই বন্দর দিয়ে কয়লা নিতে ক্রেতাদের আগ্রহ নেই। ক্রেতা না থাকলে তো ব্যবসায়ীরা কয়লা আমদানিতে আগ্রহ দেখাবে না। তাই এক বছর ধরে ভারত থেকে কয়লা আমদানি করা হচ্ছে না। যারা আগে এনেছিলেন, তারা কয়লা নিয়ে লোকসানে পড়েছেন।
বাংলাদেশ স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (কড়ইতলী-গোবরাকুড়া বন্দরের দায়িত্বে থাকা) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত থেকে ৬৯ হাজার ৬০০ টন কয়লা আমদানি করা হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৬৪ টন কয়লা আমদানি করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কম দামে দেশে কয়লা আমদানি হওয়ায় দুই বন্দরের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় কয়লা আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে দুই বন্দরের কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

×