ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

১০ কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও প্রতারক চক্র

১০ কোটি টাকা হাতিয়ে  উধাও প্রতারক চক্র

প্রতীকী ছবি

 ফরিদপুর অফিস পাবনা অফিস 

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪ | ০০:৩৬

কম মূল্যে ভোগ্যপণ্য বিক্রি ও সমিতির নামে লোকজনের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও প্রতারক চক্র। বেশি লাভের আশায় লোকজন টাকা দেওয়ার পর পণ্য ও টাকা না পেয়ে দিশেহারা। তারা ঘুরছেন পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে। 

পাবনা শহরের টেকনিক্যাল মার্কেটে কাচারীপাড়া এলাকার নাসির উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী ইমা ইসলাম স্বর্ণা, ইমার মা সুমনা ইসলাম, নাসিরের ভাই খুরশিদ আলম মহব্বত, বোন খুশি খাতুন ও সহযোগী ওমর ফারুক যৌথভাবে সততা ফুড ও প্রিয়া মহিলা সমিতি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। প্রথমে তারা মাসের প্রয়োজনীয় সব পণ্য ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এই  টাকায় ৫০ কেজি চাল, ৯ কেজি মসুর ডাল, ৯ কেজি চিনি, ২২ লিটার সয়াবিন তেল এবং পোলার চাল, লবণ, সাবান, হলুদ, মরিচসহ পুরো মাসের সব পণ্য দেওয়ার লোভ দেখান। ২০২৩ সালের মার্চে এটি চালু হয়। প্রথম দুই মাস গ্রাহকদের এসব ঠিকমতো দেওয়া হয়েছে। এতে সবার মনে আস্থা ও বিশ্বাস জন্মে। এর পর তারা ১ লাখ টাকায় প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রিয়া মহিলা সমিতি খোলেন। শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে তারা অন্তত ১০ কোটি টাকা নেন। টাকা নিয়ে তারা ব্যাংকের চেক দেন ও স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করেন। 

১০ লাখ টাকা দিলে মাসে ১ লাখ টাকা পাওয়া যায় এমন তথ্য প্রচার হলে জেলার আতাইকুলা, সাঁথিয়া, বেড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ টাকা জমা দিতে থাকেন। সম্প্রতি প্রতারকরা অফিস গুটিয়ে পালিয়ে গেছেন। সূত্র জানায়, আতাইকুলার মানিকুজ্জামান মানিক ৩৭ লাখ টাকা, পাবনার ভাড়ারার হজ প্রশিক্ষণের খাদেম মাওলানা ইউসুফ আলী ৩৭ লাখ, রনি ২৭ লাখ, তানজীল আবেদীন ৭৫ লাখ, মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বাস ১০ লাখ ৬০ হাজার, পাপ্পু ৪ লাখ ৫০ হাজার, অ্যানি ৩ লাখ, বাদশা ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া পিয়া ৫ লাখ, কেয়া ৬ লাখ, ইতি ১ লাখ ৬০ হাজার, টুকটুকি ২ লাখ টাকা জমা দেন। সব মিলিয়ে শতাধিক ব্যক্তি অন্তত ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। 

মানিকুজ্জামান মানিক সমকালকে বলেন, ‘লোকজনকে স্বাবলম্বী করা ও অধিক মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারকরা টাকা আদায় করে। ৫০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস দেওয়ার কথা বলেছে তারা। গরু কেনা বাবদ আমার কাছ থেকে ৩৭ লাখ টাকা নেয়। তারা ফোন বন্ধ করে রেখেছে।’ মাওলানা ইউসুফ আলী বলেন, ‘হজে যেতে আগ্রহীদের জমানো ৩৭ লাখ টাকা লোভে পড়ে তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’ বাংলাবাজার এলাকার ইতি খাতুন জানান, তাঁর স্বামী যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। সেখান থেকে পাঠানো ১৭ লাখ টাকা লোভে পড়ে সমিতিতে জমা দিয়েছেন। এখন সংসার ভেঙে যেতে বসেছে। টাকা ফেরত না পেলে তিনি পথের ফকির হয়ে যাবেন। পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্সের পিএস শেখ রাসেল আলী মাসুদের স্ত্রী রুনা খাতুন ২৮ ভরি স্বর্ণ ও ১৬ লাখ টাকা জমা দিয়ে এখন দিশেহারা। ক্ষতিগ্রস্তরা এ নিয়ে পাবনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের কাছে গিয়েছেন কিন্তু কোনো ফল হয়নি। 

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী ইমা ইসলামসহ সবার মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময় কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। 
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী সমকালকে বলেন, এ নিয়ে মৌখিকভাবে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। 

আরও পড়ুন

×