ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ফুলবাড়ী রেলস্টেশন

বেকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে বিপর্যস্ত

বেকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে বিপর্যস্ত

ছবি: সংগৃহীত

আজিজুল হক সরকার, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪ | ০২:৪১ | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৪ | ০২:৪১

ট্রেন চলাচল বন্ধ প্রায় ২০ দিন ধরে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করে সংসার চালানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় অনেকে খরচ চালাতে হারিয়েছেন পুঁজি। ধার-দেনা করে চলছে তাদের অনেকের। গতকাল বুধবার স্টেশনে গেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এসব তথ্য জানান।

স্টেশনের কাউন্টারের কাছে পান-বিড়ির দোকান রয়েছে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার খালাসিপাড়া গ্রামের মাহামুদ আলমের সঙ্গে। বাবা সোলায়মান আলীর দোকানটি এখানে ৪০ বছর ধরে চলছে। তাঁর মৃত্যুর পর মাহামুদ চালাচ্ছেন দোকান। এর আয়েই চার সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চলে। স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চলাচল করলে পান-বিড়ি বিক্রি করে দিনে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। ১৯ জুলাই থেকে ট্রেন বন্ধ হওয়ার পর তাঁর ব্যবসাও বন্ধ। দোকানে থাকা সব পান পচে গেছে। নষ্ট হচ্ছে বিড়ি-সিগারেট। এলাকার দোকান থেকেও বাকিতে কিছু নিতে পারছেন না। পরিচিত কিছু মানুষের কাছে ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে সব পুঁজি শেষ। ট্রেন চালু হলে দোকানের মালপত্র কীভাবে কিনবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মাহামুদ।

বুধবার দুপুরে ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনটি একরকম জনশূন্য দেখা যায়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাত্রীদের বসার আসনে অলস সময় কাটাচ্ছেন। করছেন নানা গল্পগুজব। প্ল্যাটফর্মে রিকশা-ভ্যান রেখে বিশ্রাম নিচ্ছেন কয়েকজন চালক। বিক্রির আশায় দু’জন পান-বিড়ির দোকান খুলে বসেছিলেন। তাদেরই একজন মাহামুদ। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনমাস্টারসহ অন্য কর্মীরা স্টেশনমাস্টারের কক্ষ বন্ধ করে ভেতরে বসে আছেন। 

প্ল্যাটফর্মে কথা হয় পানদোকানি নূরু মিয়ার সঙ্গে। ৬ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করেন। সংসারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে। বড় ছেলে হৃদয় হোসেন ঢাকায় গার্মেন্টসে কর্মরত। দ্বিতীয় ছেলে নাহিদ হোসেন ও তৃতীয় ছেলে জয় হোসেন বাবার অনুপস্থিতিতে ব্যবসা চালায়। এর মধ্যে জয় হোসেন এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। একমাত্র মেয়ে রোজা আক্তার পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালানো নূরু মিয়ার জন্য কঠিন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ধার-দেনায় ডুবে গেছেন, ব্যবসার পুঁজিও শেষ। খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার। 

একই দুর্ভোগের কথা বলেন চা দোকানি কোরবান আলী, মিলন শেখ ও আব্দুস সালাম; পান দোকানি নজমুল হক, আকবর আলী ও বাবু মিয়া; পত্রিকা ও পুস্তক বিক্রেতা ফারুক হোসেন। খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছেন তাদের পরিবারের। সবাই ঋণ-দেনায় জর্জরিত। সংসারের জন্য খরচ করে ফেলেছেন ব্যবসার পুঁজিও। তারা আশা করছেন, দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এতে সবার পরিবারের দুর্যোগ কেটে যাবে।

স্টেশনমাস্টার মো. ইস্রাফিল সরকার সোহাগ বলেন, ১৯ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। ফলে স্টেশনের সব কার্যক্রমও বন্ধ আছে। যাত্রী নেই, রেললাইনে মরিচা ধরে গেছে। কর্মচারীদের নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। প্ল্যাটফর্মের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বিপদে পড়েছেন। 

আরও পড়ুন

×