ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অনিয়ম-দুর্নীতির খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

অনিয়ম-দুর্নীতির খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিষ্কার করছেন শিক্ষার্থীরা সমকাল

শেখ আব্দুল জলিল, বেলাব (নরসিংদী)

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪ | ০০:৪৬ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪ | ১২:০৫

অফিসে অফিসে খোঁজ নিচ্ছে ছাত্ররা। তদারকি করছে কার্যক্রম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি যাচাই করতে চেক করছেন হাজিরা খাতা। বেলাব উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছে নানা বিষয় নিয়ে। সচেতন করা হচ্ছে কোনোভাবেই যেন দুর্নীতি ও অনিয়ম না করা হয়। বহিরাগত কেউ যেন কোনো দপ্তরে চাঁদা দাবি না করে সে বিষয়েও সতর্ক করা হচ্ছে তাদের। হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা নিজ হাতে পরিষ্কার করছেন ছাত্ররা। বাজারে বাজারে চাঁদা উঠানো ও খাজনার ব্যাপারে জড়িতদের ও সাধারণ মানুষদের সচেতন করছেন তারা।

বেলাব উপজেলা ঘুরে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র  আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। ছাত্ররা জানিয়েছে, তাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তাদের দাবি, নতুন করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন দেশে দুর্নীতি-অনিয়ম কোনোভাবেই করা যাবে না। তাদের মনিটরিং থাকবে সবসময়। এ সময় তারা জানান, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের হাজিরা খাতা চেক করে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করেন না। আবার অনেকেই ঢাকা থেকে অফিস করেন। তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে, এখন থেকে তাদের নিয়মিত অফিস করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্র সংস্কারে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বেলাবতেও বিভিন্ন সরকারি অফিস, বাজার, হাসপাতালে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেন শিক্ষার্থীরা।

বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের মেরাতলীকান্দা গ্রামের শিক্ষার্থী আরাফাত রাব্বি। তিনি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা পদত্যাগের পরদিন আমরা বেলাবতে কাজ শুরু করি। প্রথমে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে উপস্থিত হয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। এ সময় প্রতিটি দপ্তরের হাজিরা খাতা চেক করি। অফিস প্রধানদের চাঁদা-ঘুষ আদান-প্রদানের ব্যাপারে সচেতন করি। তারপর বেলাব বাজার মনিটরিং করি। এ সময় দেখা যায়, বাজারে কয়েকজন খাজনার নামে চাঁদা তুলছেন। তাদের হাতেনাতে ধরে ভবিষ্যতে এ রকম চাঁদা উঠাবে না এ রকম অঙ্গীকার নিয়ে ছেড়ে দিই। আমাদের এই কাজ অব্যাহত থাকবে।’ 

স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছি আমরা। এই হাসপাতালের খুবই বাজে অবস্থা। এখানে কোনো রোগী ভর্তি হলে সে সুস্থ না হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে। এ হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম। সহকারী বা নিচের স্তরের কর্মচারী দিয়ে এখানে কাটাছেঁড়া রোগীর সেলাই করা হয়। বায়োডিন, গজ তুলা সবই বাইর থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা। এগুলো পরিষ্কার করেছি আমরা।’

বেলাব মাটিয়ালপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ খুলনা প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তাঁর ভাষ্য, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেলাব উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে যান তারা। এ সময় অনেক দপ্তরপ্রধানকে পাওয়া যায়নি। অনেকে নিয়মিত অফিস করেন না। তাদের বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো দপ্তরে অনিয়ম-দুর্নীতি করা যাবে না। ইউওনকে অনুরোধ করা হয়েছে– এখন থেকে মাসে একবার হলেও যেন তিনি সাধারণ মানুষদের নিয়ে মিটিং করে তাদের সমস্যা শোনেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সাধারণ মানুষকেও সচেতন করা হচ্ছে।

বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ‘ছাত্ররা এসেছিল। তারা বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছে। তারা দপ্তরপ্রধানদের সঙ্গে কাজকর্মের ব্যাপারে আলোচনা করেছে। তাদের উদ্যোগটি ভালো। আমার সঙ্গেও তারা কথা বলেছে। বেলাব উপজেলা কার্যালয়ে কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুটা সমস্যা তো হবেই। তবে বেলাবর মানুষ অনেকটা শান্তিপ্রিয় মনে হয়েছে আমার কাছে। এখানে তেমন বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি।’

আরও পড়ুন

×