ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ব্যবসায়ীর পণ্য জব্দ করে প্রার্থীর ঘাড়ে দোষারোপ

ব্যবসায়ীর পণ্য জব্দ করে প্রার্থীর ঘাড়ে দোষারোপ

.

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪ | ০১:০১ | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৪ | ১২:৫৫

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জব্দ করার সময় ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের পণ্য কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সালমা আক্তারের বলে দাবি করা হয়। তবে পুলিশি তদন্তে জানা যায়, জব্দ পণ্যগুলো মিল্টন স্টোরের স্বত্বাধিকারী কবির আলম ভূঞার। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে এলাকায়। অনেকেই বলছেন, এই ৩৫ লাখ টাকার পণ্য কবির আলম ভূঞার। তবে কেন নির্বাচনের এক দিন আগে জব্দ করে সালমা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হলো? আবার অনেকে বলছেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন না হলে সমাজে এমন অপরাধ বেড়ে যাবে।

গত ৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন পাঁচজন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে কোমর বেঁধে মাঠে ছিলেন চিরাং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা আক্তার। জানা যায়, নির্বাচনের এক দিন আগে বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুতের খবর পায় উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, খবর পেয়ে রাতেই তারা ছুটে যান ছিলিমপুর নূরুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান মজুত বিপুল পরিমাণ লাক্স সাবান, তোয়ালে, জর্দ্দার কৌটা প্যাকেট করা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতি দেখে দৌড়ে পালিয়ে যান কয়েকজন শ্রমিক। এক শ্রমিক ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান, মজুত পণ্যগুলো সালমা আক্তারের। তিনি ভোটারদের মাঝে বিতরণের জন্য ছোট ছোট প্যাকেট করতে বলেছেন। তাঁর এই বক্তব্য ভিডিও করে মামলার সময় জমা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে পণ্যগুলো জব্দ করা হয়। সে সময় জব্দ পণ্যগুলো চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল কবির খানের জিম্মায় দেওয়া হয়।

গত ৬ জুন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব হোসেন বাদী হয়ে সালমা আক্তারসহ ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৭(৬)২৪। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, জব্দ পণ্যের নমুনা দেখে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, প্রার্থী সালমা আক্তার ভোটারদের প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যেই তা মজুত করেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি, ২০১৬-এর ১৭(গ) পরিপন্থি। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ দত্ত জানান, জব্দ ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের লাক্স সাবান, তোয়ালে, জর্দ্দার কৌটা ও তিনটি মোটরসাইকেল ৯ জুন থানায় এনে সংরক্ষণ করা হয়। ১১ জুন জামিনে মুক্তি পান সালমা আক্তার। ২৩ জুন মিল্টন স্টোরের মালিক কেন্দুয়া পৌর এলাকার ওয়ারেশপুর (চকবাট্টা) গ্রামের বাসিন্দা কবির আলম ভূঞা নেত্রকোনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করে জানান, ওই পণ্যগুলো তাঁর ক্রয় করা। আদালতের বিচারক বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জুন আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। 

তদন্ত কর্মকর্তার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন, কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে দেখা যায়, জব্দ পণ্যগুলো মিল্টন স্টোরের। গত ২৮ জুলাই জব্দ পণ্য মিল্টন স্টোরের মালিকের অনুকূলে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন নেত্রকোনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শাহরিয়ার শামস। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই থানা থেকে মিল্টন স্টোরের মালিককে পণ্যগুলো বুঝিয়ে দেন তদন্ত কর্মকর্তা।

মামলাটি কী পর্যায়ে আছে– জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ দত্ত বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

সালমা আক্তার বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন মাদ্রাসায় গিয়ে মালপত্র জব্দ করায় নির্বাচনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রচার করা হয়েছে আমাকে গ্রেপ্তার করার কথা। যে কারণে আমার কর্মী-সমর্থকরা হতাশ হয়েছেন। এমনটি না হলে নির্বাচনে আমিই বিজয়ী হতাম। আমি শুরু থেকেই বলছি, এ মালপত্র আমার না। ব্যবসায়ী মিল্টন স্টোরের মালিক কবির আলম ভূঞার।

বিষয়টি জানতে মিল্টন স্টোরে গিয়ে কবির আলম ভূঞাকে পাওয়া যায়নি। তিনি একটি মিছিলে গেছেন বলে জানান তাঁর দোকানের কর্মচারী। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন নম্বর চাইলে তিনি দাবি করেন, মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না কবির আলম।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদারকে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুন

×