ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

মামলা-গ্রেপ্তার আতঙ্ক

কার্যালয়ে ফেরেননি রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিরা

কার্যালয়ে ফেরেননি রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিরা

ফাইল ছবি

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪ | ১৮:৩৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে যান রাজশাহীর বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি। ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও অনেকেই কার্যালয়ে ফেরেননি। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা। 

রাজশাহী জেলায় ৭২টি ইউনিয়ন, ১৪টি পৌরসভা ও ৯টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগের সেবা কার্যক্রম বন্ধ। আত্মগোপনে আছেন বেশির ভাগ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দু’একজন অন্য দলের থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে কাজ করায় নিজ দলের নেতাকর্মীর ভয়ে তারাও অফিস করতে সাহস পাচ্ছেন না। গোপন স্থান থেকে জরুরি ফাইল সই করছেন কেউ কেউ।

গত ৫ আগস্ট চারঘাট পৌরসভা কার্যালয় এবং মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হকের ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করা হয়। এরপর থেকে তিনি পৌরসভায় আসছেন না। কার্যালয়ে আসছেন না উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুল হাসান মামুনও। 

বাঘার আড়ানি পৌরসভার মেয়র মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচারের তিনটি মামলা বিচারাধীন। ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর থেকেই তিনি এলাকা ছাড়া। উপজেলার চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু মাঝে মধ্যে অফিস করছেন। গোদাগাড়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র অয়েজুদ্দিন বিশ্বাস আত্মগোপনে। একই অবস্থা তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হকের। 

বাগমারার তাহেরপুর পৌর মেয়র শায়লা খন্দকার ও তাঁর স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের দুটি গাড়ি ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। কেশরহাট পৌর মেয়র শহীদ, নওহাটা পৌর মেয়র হাফিজুর রহমানও পলাতক। অফিস করছেন না গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল ও তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর রশীদ হায়দার ময়না। 

পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র আল মামুন খান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় বিএনপির আরেকটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে। এজন্য তিনিও অফিস করতে পারছেন না।

এছাড়াও বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, পবা উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ডাবলু ও মোহনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুলও আত্মগোপনে রয়েছেন। 

এদিকে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজের প্রধানরাও ভয়ে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। 

চারঘাট উপজেলার শলুয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি প্রতিদিন রাজশাহী শহর থেকে উপজেলা অফিসে এসে বসে থাকছি। কিন্তু ভয়ে কলেজে যেতে পারছি না। যেতে নিষেধ করে ফোনে নানা রকম হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।’ 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমও বন্ধের উপক্রম। অনেক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পলাতক থাকায় বেতন বিলে স্বাক্ষর হচ্ছে না। আমার বিদ্যালয়ে ভাঙচুর করে অফিসে তালা দেওয়া হয়েছে।’ 

বাঘা উপজেলার বাঘা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। সরকার পতনের পর তিনিও কলেজে আসেননি। একই অবস্থা বাঘা সদরের মোজাহার হোসেন মহিলা কলেজের। এই কলেজের অধ্যক্ষ নসিব উদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রাজশাহী জেলার সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলা-উপজেলার অধিকাংশ স্কুল-কলেজে যোগ্যদের বঞ্চিত করে দলীয় ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠানপ্রধান কিংবা সভাপতির পদে বসানো হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর তারা নিজ প্রতিষ্ঠানে কোণঠাসা। স্কুল-কলেজে ভয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের দাপ্তরিক কার্যক্রম সচল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকা সরকারি সার্ভার সচল হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

 

আরও পড়ুন

×