টাঙ্গাইলে সাবেক মন্ত্রী রাজ্জাক ও টিটুসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪ | ১৭:৪৯
টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের বিজয় মিছিলে হামলায় মারুফ মিয়া (১৪) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। নিহতের ঘটনায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৫৬ জন নেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে হত্যা আসামি করা হয়েছে।
রোববার রাতে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত মারুফের মা মোর্শেদা বেগম। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা শহরে বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি পৌর শহরের মেইন রোড এলাকায় পৌঁছলে উল্লেখিত ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আনন্দ মিছিলে অতর্কিতভাবে হামলা করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে মারুফ বাঁচার জন্য রাস্তার পাশে সিটি ব্যাংকের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেন। ওই স্থানে আসামিরাও ঢুকে পড়ে। আসামির মধ্যে একজন মারুফের মাথার ডান পাশের কানের নিচে গুলি করে। গুলি লাগার পর মারুফ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে ছাত্র-জনতা উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে। দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম সিরাজুল হক আলমগীরকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির, তার বড় ভাই ও জেলা বাস কোচ মিনি বাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, সাবেক এমপি ছানোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি অনুপম শাহজাহান জয়, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ, সাবেক এমপি হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, সহসভাপতি আশরাফুজ্জামান খান স্মৃতি, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সাইফুজ্জামান সোহেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন মানিক, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা, যুবলীগের সভাপতি মাসুদ পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীরুল ইসলাম হিমেল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাতিনুজ্জমান খান সুখন প্রমুখ।
টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয় মিছিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। ওই হামলায় একজনের মৃত্যু হয়। নিহতের মা মোর্শেদা বাদী হয়ে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল পৌর শহরের মেইন রোড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিতে নিহত হয় মারুফ। সে শহরের শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে সাবালিয়া স্টেশন রোড এলাকার মজনু মিয়ার ছেলে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে মারুফ মিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মারুফকে তাদের গ্রামের বাড়ি বাসাইল উপজেলার জশিহাটি গ্রামে দাফন করা হয়।